মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করল মালদ্বীপ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নের কথাও জানিয়েছে দেশটি।
গতকাল সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মালদ্বীপ ইনডিপেনডেন্ট এ কথা জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বিবৃতিতে জানায়, সংখ্যালঘুদের ওপর মিয়ানমারের ‘প্রথাগত এই দমন’ এর আগেও জাতিসংঘ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতার ফলে বেশ কিছু রোহিঙ্গার মৃত্যু এবং হাজারো মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ায় মালদ্বীপ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমন-পীড়নের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি রক্তক্ষয় বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) হামলার অভিযোগ করে দেশটির পুলিশ। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে তৎপর রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। প্রতিদিনই নৌকায় বা সীমান্তপথে আসা রোহিঙ্গা আটক করে পরে তাদের ফের নিজ দেশে পাঠাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করার সময় নৌকা ডুবে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা মারা গেছে।
যারা জীবন বাঁচিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তাদের অবস্থাও করুণ। অনেককে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় পেলেও খাবারের তীব্র সংকটের মধ্যে রয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেক রোহিঙ্গা পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে উপকূলের পাশে বন-জঙ্গল সাফ করে বাঁশ-প্লাস্টিক দিয়ে ছাউনি তৈরির চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা ও ১৪ সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ছয়শ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।