প্রেমিকের হাতে স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত জেনে মনুয়ার মদপান
মোবাইল ফোনেই স্বামীর আর্তচিৎকার শুনেছেন। বুঝতে পেরেছেন স্বামী শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এটা জানতে পেরেই আনন্দে ‘হিপ হিপ হুররে’ বলে ওঠেন মনুয়া। আনন্দে মদপানও করেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনায় নিহত অনুপম সিংহের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার পুলিশকে এসব তথ্য দিচ্ছেন। গত ২ মে নিহত হন অনুপম। পুলিশ ওই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মনুয়া ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক অজিত রায়কে আটক করে। আটকের পর দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
অজিত বিভিন্ন ধাপে খুন করেন অনুপমকে। আর ফোনে অনুপমের শেষ যন্ত্রণার চিৎকার শুনেছেন মনুয়া। বারাসাতের হৃদয়পুরের তালতলা এলাকায় নিজের বাড়িতে খুন হন অনুপম। তাঁর মাথায় ভারী লাঠি দিয়ে আঘাত করে, মুখ থেঁতলে, হাত-পায়ের শিরা কেটে খুন করা হয়।
জামিন পেলেই অজিতকে বিয়ে
বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে উভয়ের জেরা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরার মুখে অজিত ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু মনুয়া ভেঙে পড়েননি। উল্টো মনুয়া পুলিশকে জানান, জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেলেই তিনি প্রেমিক অজিতকে বিয়ে করবেন। পাশাপাশি পুলিশকে মনুয়া প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কবে আমাদের জেলে পাঠাবেন বলুন তো?’ মনুয়ার এমন মানসিক কঠোর অবস্থানে হতবাক পুলিশ কর্তারাও। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মনুয়া অত্যন্ত শক্ত স্বভাবের মেয়ে। স্বামীকে খুন করার পরেও সে মানসিকভাবে এমন শক্ত ছিল যে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না।’
অনুপম বাংলাদেশের বলে ছোট করতেন মনুয়া
পুলিশ অনুপম ও মনুয়ার একটি ভিডিও জোগাড় করে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বনভোজনে সবার সামনেই স্বামী অনুপমের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অথচ বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী অনুপমকে কাছে ঘেঁষতে দিতেন না মনুয়া। যেহেতু অনুপমের আদি বাড়ি বাংলাদেশে, তাঁর বাবা ও মা বাংলাদেশে থাকেন, সেই প্রসঙ্গ তুলে অনুপমকে খাটো করতে চাইতেন মনুয়া। অনুপমের খাওয়াদাওয়া ভালো না, তিনি জামাকাপড় পরতে পারেন না এ রকম বিভিন্ন বিষয়ে সবার সামনেই অনুপমকে ছোট করতেন মনুয়া।
‘আমার ছেলেকে জঘন্যভাবে খুন করা হয়েছে’
অনুপমের বাবা জগদীশ সিংহ বাংলাদেশের যশোরে থাকেন। কেশবপুরে মঙ্গলকোর্ট-পাঁচপোতা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে রাস্তার কুকুরের থেকেও জঘন্যভাবে খুন করা হয়েছে।’
জগদীশ সিংহ জানান, মাস চারেক আগে মনুয়ার অস্ত্রোপচার হয় বারাসাতের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে। জরুরি ভিত্তিতে ওই অস্ত্রোপচার করানো হয়। কিন্তু ওই অস্ত্রোপচারটা কী ছিল তা জানতেন না মনুয়ার স্বামী অনুপম। এমনকি ওই নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ অনুপম বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানায়নি। জগদীশ সিংহ বলেন, ‘আমি মনুয়ার অপারেশনের খবর পেয়েই বারাসাতের নবপল্লী এলাকার ওই নার্সিং হোমে যাই। কিন্ত আমাকে জানতে দেওয়া তো দূরের কথা আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই নার্সিং হোমে। আমাকে বলা হয়েছিল, মনুয়ার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। কিন্তু আমার সন্দেহ মনুয়ার গর্ভপাত করানো হয়েছিল। আমার ছেলে অনুপমও জানত না তার স্ত্রীর কী অপারেশন করা হয়েছে।’ তিনি দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন ভারত সরকারের কাছে।