পাসপোর্টের গায়ের রং কী বলে?
কোনো দেশ ভ্রমণের আগে সবচেয়ে দরকারি বিষয় হলো পাসপোর্ট। দেশভেদে সেই পাসপোর্টের রং হয় ভিন্ন ভিন্ন। এই রংগুলো দেখে কারো মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, এগুলোর দরকার কী? এর কী কোনো মানে আছে?
উৎসুক মনের উল্লিখিত কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করেছে ব্যবসাবিষয়ক ওয়েবাইট বিজনেস ইনসাইডার।
সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাসপোর্টের রং লাল, নীল, সবুজ কিংবা কালো হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অঞ্চলভেদে এই বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়।
এ বিষয়ে পাসপোর্টের র্যাংকিংকারী প্রতিষ্ঠান পাসপোর্ট ইনডেক্সের মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট র্যান্ট বোগোসিয়ান বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই তাদের পাসপোর্টে মূল রং হিসেবে নীল ও লাল ব্যবহার করে। যদিও এসব রঙে নানা মাত্রা থাকে।
বোগোসিয়ানের মতে, পাসপোর্টের প্রচ্ছদ বা গায়ের রং নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে প্রতিবেশ, রাজনীতি এমনকি ধর্মও। তবে এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা বা বিধিবিধান নেই।
আকার, ধরন ও প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় পাসপোর্টের মান নির্ধারণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা অ্যান্থনি ফিলবিন বলেন, ‘পাসপোর্টের রং কী হবে, তা নিয়ে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।’
তাহলে পাসপোর্টের রং দেখে আমরা কী বুঝব? বোগোসিয়ানের উত্তর হলো, এটা জাতীয় পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে।
লাল পাসপোর্ট
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলো গাঢ় লাল রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। যারা ইইউতে অন্তর্ভূক্ত হতে চান তাঁরাও নিজেদের পাসপোর্টের রং পরিবর্তন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের নাম টানা যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম ইকোনমিস্ট একে ‘ব্র্যান্ডিং এক্সারসাইজ’ বলে অ্যাখা দিয়েছে। এই পাসপোর্টগুলোকে বুরগুন্ডি বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আন্দিয়ান কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত চারটি দেশ বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুও লাল রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। সুইজারল্যান্ড তাদের পতাকার রঙের আদলে পাসপোর্টের রং লাল রেখেছে।
নীল পাসপোর্ট
বোগোসিয়ান বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ক্যারিবীয় দেশগুলো সাধারণত নীল রঙের ব্যবহার করে থাকে। এই ধরনের পাসপোর্টের ব্যবহার ‘আধুনিক বিশ্বে’ খুবই সাধারণ।
মারকোসার নামের একটি জোটভুক্ত ব্রাজিল,আর্জেটিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও ভেনিজুয়েলাও নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করে।
১৯৭৬ সাল থেকে নিজেদের পতাকার সঙ্গে মিল রেখে যুক্তরাষ্ট্র পাসপোর্টে নেভি ব্লু রং ব্যবহার করে।
সবুজ পাসপোর্ট
বোগোসিয়ান বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ‘অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলো তাদের ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় সবুজ রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করে।’ ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটে (ইসিওডব্লিউএএস)থাকা দেশ নাইজেরিয়া ও সেনেগালও একটু আলাদা ধরনের সবুজ রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করে।
কালো পাসপোর্ট
এখানে পাসপোর্টের রং নির্বাচনের আরো বাস্তব ব্যাখ্যা রয়েছে। গাঢ় রং মূলত কম ময়লা হয় এবং দেখতেও অনেক বেশি দাপ্তরিক। উদাহরণ হিসেবে বতসোয়ানা জাম্বিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নাম নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কালো অনেক সময় জাতীয় রংকেও নির্দেশ করে।
‘আপনি চাইলে পাসপোর্টের রং দেখেও অনেক কিছু জানতে পারেন। পাসপোর্ট মূলত ভূ-রাজনীতি কিংবা অর্থনীতির চেয়ে বেশি কিছু নির্দেশ করে’, বলেন বোগোসিয়ান।