ভারতের সেই ‘মোগলি’ আসলেই ‘মোগলি’ নয়
ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জঙ্গলে পাওয়া যায় এক মেয়েশিশুকে। তার পরনে ছিল না কোনো জামাকাপড়। চার হাত-পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল সে। আরো অবাক করা বিষয় হলো, তাকে নাকি ঘিরে রেখেছিল একদল বানর! ওই অবস্থায় নাকি তাকে উদ্ধার করা হয়।
ব্যস! শুরু হয়ে গেল গল্পের ওপর রং চড়ান। পাঁচ কান হতে হতে ঘটনাটি তিল থেকে তাল হয়ে গেল। বলা হলো, ওই শিশুটিকে মানুষ করেছে বানর। তাই সভ্য জগৎ সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না সে। বোঝে না মানুষের ভাষা। খেতে পারে না সাধারণ কোনো খাবার। হাবভাব একেবারে পশুর মতো। আর এমন জমাট গল্প পেয়ে ফলাও করে প্রকাশ করল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বলা হলো, শিশুটি রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের গল্পের মোগলির জীবন্ত সংস্করণ।
তবে আসল সত্যটা উঠে এলো একটু পরে। কথিত ওই মোগলি নাকি আসলেই ‘মোগলি’ নয়। উত্তর প্রদেশের কাতারনিয়া ঘাট এলাকার বন বিভাগের কর্মকর্তা জেপি সিং সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানান, ওই শিশুটিকে নাকি পাওয়া যায় রাস্তার পাশে। আদৌ জঙ্গলের ভেতরে ছিল না সে। আর বানরের দল তাকে ঘিরে রেখেছিল, এ কথাটি তো উড়িয়েই দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি আরো খোলসা করেন সর্বজিৎ যাদব নামের এক পুলিশ সদস্য। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ক্যামেরার ভিডিও দেখেই ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তার আশপাশে কোনো বানর ছিল না।
ঘটনা যদি এমনই হয়, তাহলে কেন ওই শিশু হাঁটতে পারে না, খেতে পারে না স্বাভাবিক খাবার কিংবা কথাও বলতে শেখেনি এখনো, এমন প্রশ্ন এসেই যায়। এ বিষয়টিতেও ধোঁয়াশা দূর করেছেন বন বিভাগের ওই কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, বানরের কাছে শিশুটি মোটেও মানুষ হয়নি। তাকে ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যায়, সে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী। এ কারণেই সে হাঁটতে ও কথা বলতে পারে না। বাবা-মা ওই শিশুটিকে পরিত্যাগ করতে পারে বলে জানান তিনি।
উদ্ধারের পর উত্তর প্রদেশের বাহরাইখ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় কথিত ওই মোগলিকে। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডিকে সিংও বলেছেন শিশুটির শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা।