তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান স্থিতিশীল : মন্ত্রী
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার রাজ্যের অবস্থান স্থিতিশীল।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে এখনো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষে পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ কোনো ভাবনাই ভাবা হয়নি।
রাজীব জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দেখছেন। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারেন না তিনি। তিস্তা চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গ লাভবান না ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে ব্যাপারেও কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আসছেন। ওই সফরে তিস্তা চুক্তি আলাদা গুরুত্ব পেতে পারে বলে এরই মধ্যে দুই দেশের রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও যে আগ্রহী, তা এর আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে স্পষ্ট করে দিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গর সরকার এবার শেখ হাসিনার সফরে কতটা সদর্থক ভূমিকা নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ঘিরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে। আগ্রহ বাড়ছে রাজনৈতিক মহলেও।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিস্তা চুক্তি আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রেস্টিজ ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হলে তার পুরো বাহবা লাভ করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা ক্ষতি মেনে নিয়েও তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অবস্থানকে মজবুত করতে চাইছেন। এর আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মমতা বাংলাদেশের মানুষকে কথা দিয়ে এসেছিলেন, ‘তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে আমার ওপর ভরসা রাখুন।’ ফলে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি একেবারেই অমানবিক সিদ্ধান্ত নেবেন এমনটা যে নয়, তা বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
তাঁদের ধারণা, মোদি সরকার যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার বশীভূত হয়ে মমতার দল তৃণমূলকে চাপে ফেলেছে, সেই চাপ থেকে তৃণমূলকে বের করে নেওয়ার রফা সূত্র মিললে সহজেই হয়তো তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করবেন মমতা। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন হলে তা যে ঐতিহাসিক এক চুক্তি হিসেবে মোদির মুকুটে এক নয়া পালক যুক্ত হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
জানা গেছে, মোদি এবারের শেখ হাসিনা সফরে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের সব রকম প্রচেষ্টা চালাবেন। যার প্রক্রিয়া এর আগেই শুরু করেছেন তিনি। কংগ্রেস জামানায় মনমোহন সিং সরকার যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্ধকারে রেখে ঢাকায় গিয়ে তিস্তা চুক্তি কার্যকরের পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেই রাস্তায় প্রথম থেকেই হাঁটতে চাননি মোদি। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তিস্তা চুক্তি কার্যকর করার পদক্ষেপ বেশ কিছুদিন ধরেই নিয়েছেন তিনি। তবে এবারে শেখ হাসিনার সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের অবস্থান কী হবে, সেটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে নানা দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি যে বেশ আগ্রহী, তা এর আগে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশকে যে তিনি নিজের দেশের মতোই ভালোবাসেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে তাঁর মন কাঁদে সে কথাও খোলাখুলি বলেছেন তিনি। তবে তিস্তা চুক্তি নিয়ে সপাটে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি কখনই।