পলাশ-শিমুল আর আবিরে রাঙিয়ে শান্তিনিকেতনে দোল উৎসব
পলাশ-শিমুল আর আবিরের রঙে রাঙিয়ে রোববার সকাল থেকে দোল উৎসবে মেতে উঠল শান্তিনিকেতন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুরে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে রঙিন আবিরে আবিরে আর ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দোর খোল, লাগল যে দোল’ গানের সুরে সুরে শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব।
বসন্ত উৎসবের লগনেই বাঙালির দোল উৎসব। আর তাই রোববার সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়ে রীতিমতো উৎসবের চেহারা নিল শান্তিনিকেতন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যেতেই বসন্তবন্দনার মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয় শান্তিনিকেতনে। সন্ধ্যায় বৈতালিকে সংগীত পরিবেশন করে বসন্ত দিনের আহ্বান জানান বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা।
এরপর রোববার সকালে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসবে মেতে ওঠে শান্তিনিকেতন। বিভিন্ন ভবন থেকে ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা বের করে আশ্রমমঠ পর্যন্ত যায়। এরপর বিশ্বভারতী চত্বরে হয় মূল অনুষ্ঠান। সেখানে নৃত্যনাট্যের পাশাপাশি চলে নানা অনুষ্ঠান।
সকাল থেকে শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত নানা অনুষ্ঠানে আশ্রমের ছাত্রছাত্রীরা থেকে ভিনদেশি ছাত্রছাত্রীরাও অংশ নেন। এ ছাড়া আজ সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’ নৃত্যনাট্য পরিবেশন করবেন।
শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের টানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এসে ভিড় জমিয়েছেন। দু-তিনদিন আগে থেকেই শান্তিনিকেতনের হোটেলগুলো উপচে পড়েছে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে।
শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবকে ঘিরে আট স্তরের কড়া নিরাপত্তাবলয়ের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় লাগানো হয়েছে নজরদারি ক্যামেরাও। রয়েছে ড্রোন ক্যামেরাও। রোববার সকাল থেকে শান্তিনিকেতনের আশ্রমমঠের মূল অনুষ্ঠানে আকাশে চক্কর কাটে ড্রোন। এ ছাড়া রয়েছে চারটি ওয়াচ টাওয়ারও। দেশি বিদেশি পর্যটকদের ওপর রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশি নজরদারি।
বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিশ্বভারতীর প্রায় ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক বাসন্তি রঙের টুপি পরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর উপাচার্য স্বপন কুমার দত্ত জানান, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা বসন্ত উৎসবে মূলত রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনকেই ভালোবেসে এখানে আসেন।
নিজেরা নিজেদের মতো করে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনে আনন্দ করেন। এটা শান্তিনিকেতনের চিরাচরিত ঐতিহ্য।
উল্লেখ্য, ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুরু করেন ‘ঋতুরঙ্গ’ উৎসবের। শান্তিনিকেতনের ‘প্রাককুঠির’-এর সামনে শুরু হয় এই উৎসবের।
এখন অবশ্য প্রাককুঠির শমীন্দ্র পাঠাগার বলেই পরিচিত। ১৯২৫ সাল নাগাদ সেই ‘ঋতুরঙ্গ’ উৎসব পরিণত হয় বসন্ত উৎসবে। তখন থেকেই শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে দেশ-বিদেশের নানা অতিথিদের পাশাপাশি শামিল করা হতো আদিবাসীদেরও। সে প্রথা আজও চলছে।
আগে বসন্তের যে কোনো দিনে অনুষ্ঠিত হতো এই উৎসব। পরে শুধু বসন্ত পূর্ণিমার দিনেই এই উৎসব শুরু হয়।