মায়ের লাশ নিয়ে সীমান্তে আটকে বাংলাদেশি যুবক
বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা আছে। তবুও মায়ের লাশ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। আইনি মারপ্যাঁচে পড়ে চারদিন ধরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশি এক যুবক।
মা কনিকা রাণী সরকারের চিকিৎসা করাতে ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা টোকন সরকার। যাওয়ার কথা ছিল ভারতের বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু ভারতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর মা কনিকা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা এক আত্মীয়র মাধ্যমে মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের জটিলতা এড়াতে ওই সময় কনিকার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ওই আত্মীয়র বাড়ির ঠিকানা লেখা হয়।
পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি কনিকা সরকার মারা যান । মৃতদেহ হস্তান্তরের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই আত্মীয়র বাড়ির ঠিকানায় ডেথ সার্টিফিকেট দেয়। আর এতেই তৈরি হয় আইনি জটিলতা।
মৃত্যুর পরের দিন কনিকা সরকারের লাশ হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার সময় ঠিকানা না মেলার কারণে টোকনকে আটকে দেয় ভারতীয় শুল্ক (কাস্টমস) বিভাগ।
ঠিকানার গোলমালে মায়ের লাশ নিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন টোকন সরকার। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরেও লাভ হয়নি। দেশের প্রচলিত আইনের কারণে কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দেয় সবাই।
এদিকে কনিকা সরকারের মৃতদেহে পচন ধরছিল। কিন্তু অনুমতি না থাকায় কোনো হাসপাতাল বা হিমাগারে তাঁর লাশ রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন টোকন। অবশেষে স্থানীয়দের সহায়তায় কাঠের গুঁড়া ও ধানের তুষ দিয়ে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
সর্বশেষ খবরে গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক সঞ্জয় বসুর দ্বারস্থ হন টোকন। সব শুনে জেলা প্রশাসক কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন ও মালদা জেলা হাসপাতালের মধ্যে একটা যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন।
সঞ্জয় বসু নিজে যোগাযোগ করে মালদা হাসপাতাল থেকে সংশোধিত নতুন ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যুর ব্যবস্থা করেছেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিশেষ অনুমতিও লাগবে। আর এই দুই কাগজ আনতে পারলেই কনিকা সরকারের লাশ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
টোকন জানান, এই দুটি কাগজ আনতে আরো দুই দিন লাগতে পারে। সে পর্যন্ত পচন ঠেকাতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।