পুরুষের অধিকার আদায়ে লড়ছেন এই নারী
ভারতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। সেই দেশেই কিনা পুরুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছেন এক নারী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ওই নারীর নাম দীপিকা ভার্দওয়াজ। তিনি একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, নারীদের প্রতি হীন আচরণের জন্য মাঝেমধ্যেই ভারতে উত্তাল হয়ে ওঠে। ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনার রেকর্ড আছে। প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং প্রতি ৬৯ মিনিটে যৌতুকের জন্য একজন গৃহবধূ মারা যান। এ ছাড়া বছরপ্রতি হাজারে ১০০ নারী গর্ভপাত ঘটান।
৩১ বছর বয়সী দীপিকা নারায়ণ ভার্দওয়াজ জানেন যে তিনি যা করছেন সেটা খুব ব্যতিক্রম বিষয়। কিন্তু এর পেছনে তাঁর কিছু যৌক্তিক প্রশ্নও রয়েছে। যেমন- ‘পুরুষরা কি বিপদে নেই? তাঁরা কি বৈষম্যের শিকার হয় না? অপরাধের শিকার হতে পারে না?’
দীপিকা বলেন, ‘নারীর জন্য লড়াই করতে যেমন নারী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, ঠিক তেমনি পুরুষের জন্য লড়াই করতে গেলেও পুরুষ হতে হয় না। আমি নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কথা বলতে চাই না, কারণ লাখ লাখ মানুষ রয়েছে যারা সেটা নিয়ে কথা বলে।’
দীপিকার লড়াই সেই মুহূর্তের জন্য, যখন ভারতের যৌতুকবিরোধী আইনের দণ্ডবিধি ধারা ৪৯৮(এ)-এর অপব্যবহার করা হয়। প্রথম দীর্ঘ তথ্যচিত্রের জন্য ভার্দওয়াজ ভারত ঘুরে বেড়াচ্ছেন ‘বিবাহ শহীদ’দের চিত্র তুলে আনতে। যেটি কর্তৃপক্ষকে আইনটি পুনরায় লেখার জন্য প্রভাবিত করার একটি পদক্ষেপ হবে।
যখন দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌতুকের কারণে নারীদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, ঠিক তখনই ভারত ১৯৮৩-এর সেকশন ৪৯৮-এ চালু করে। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্বারা নতুন বউ পুড়ে মরার খবর থাকত এবং সেগুলোকে রান্নাঘরের দুর্ঘটনা বলে চালানো হতো। নারী সংসদ সদস্যের প্রতিবাদ, নারীবাদীদের চাপের মুখে সরকার এই আইনটি করতে বাধ্য হয়।
ভার্দওয়াজ একসময় সাংবাদিক ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে ২০১২ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেছেন।
দীপিকা বলেন, ‘২০১১ সালে আমার এক আত্মীয় বিয়ের তিন মাসের মাথায় পৃথক হয়ে যায়। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, তাঁর স্বামী এবং আমাদের পুরো পরিবার তাঁকে মারধর করে যৌতুক দাবি করে। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন। সেই মামলায় তাঁকে নিয়মিত মারধর ও নির্যাতন করার অভিযোগে আমারও নাম ছিল। আমাদের পরিবার শান্তি বজায় রাখতে অনেক টাকাও দিয়েছিল। মামলাটিও শেষ হয়েছিল। কিন্তু আমি শান্তিতে ছিলাম না।’
ভারতে ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়ের করা ধর্ষণ মামলার ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ মিথ্যা হিসেবে পাওয়া গেছে।
পুরুষদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদ করতে ভার্দওয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেছে নিয়েছেন।
ভার্দওয়াজ বলেন, ‘কিছু নারীবাদী আমাকে বলেছেন নারী হয়ে পুরুষের জন্য লড়াই করা রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। কিন্তু আমি সবার জন্য ন্যায়বিচার চাই, আমার কাজ নারীর বিরুদ্ধে নয়, আমার কাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে।’