জাল্লিকাট্টু বন্ধের প্রতিবাদে রোজা রাখবেন এ আর রহমান
সূর্যাস্তের সময়ে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে লাখো মানুষের ভিড়। প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। সবার মুখেই এককথা, ‘জাল্লিকাট্টু বন্ধ করা যাবে না।’
জলকাট্টু তামিলনাড়ুর ঐতিহ্যবাহী খেলা। এতে ষাঁড়ের সঙ্গে লড়েন রাজ্যের তরুণরা। আর সম্প্রতি পরম্পরা ধরে চলে আসা এই খেলাটিই তিন বছরের জন্য বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘পেটা’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেন হাইকোর্ট। আর এতেই ফুঁসে উঠেছে রাজ্যটির জনতা।
সমুদ্রসৈকতে গতকাল সন্ধ্যায় বড় সমাবেশ হয়। এর আয়োজনে ছিল ছাত্ররাই। এ ছাড়া আইনজীবী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী এবং প্রযুক্তি পেশাজীবীরাও শামিল হয়েছিলেন ওই প্রতিবাদে। সবার মুখেই একটাই কথা, ঐতিহ্যবাহী জাল্লিকাট্টু ফিরিয়ে আনতে অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশ প্রয়োগ করুক কেন্দ্রীয় সরকার।
আর এই নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের প্রয়োগ নিয়েই কেন্দ্র রাজি নয়। গত সপ্তাহের শুরুতে জাল্লিকাট্টু খেলাকে ‘অমানবিক ও ভয়ংকর’ বলে তিন বছরের জন্য বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ দেওয়া হয়। এর পরই রাজ্যে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে।
প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। পরে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও পান্নিরসিলভাম আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেখা হবে। আর সেখানে তিনি জাল্লিকাট্টু নিয়ে অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশ প্রয়োগের আহ্বান জানাবেন।
কিন্তু দিল্লিতে মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর পান্নিরসিলভাম দাবি করেন, মোদি এ মুহূর্তে অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশ প্রয়োগে রাজি নন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন তিনি।
আর মোদির এ সিদ্ধান্তটিই যেন ছাইচাপা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবারও চেন্নাইয়ের রাস্তায় জাল্লিকাট্টু ফেরত চেয়ে বিক্ষোভে নেমে আসেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ লক্ষাধিক মানুষ।
সন্ধ্যায় মেরিনা সৈকতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে মোদি-পান্নিরসিলভামের মুখে কালি মাখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে মানুষ। এ ছাড়া তামিলনাড়ু রাজ্যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এডিএমকের সাধারণ সম্পাদক শশীকলা এবং ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী মেনকা গান্ধীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা।
ঐতিহ্যবাহী এই খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হয়েছেন তামিলনাড়ুর রুপালি পর্দার তারকা, খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পীসহ অনেকেই। তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণকারী ভারতের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী আল্লাহ রাখা রহমান (এ আর রহমান) রাজ্যবাসীর এ প্রতিবাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবার তামিলনাড়ুর আত্মার (জাল্লিকাট্টু) সমর্থনে রোজা রাখব আমি।’
তামিল সুপারস্টার রজনীকান্তও জলকাট্টু বন্ধের বিরুদ্ধে। গত বুধবার তিনি এ নিয়ে একটি টুইট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, যেকোনো আইন মানুষের উপকারেই হয়। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, জাল্লিকাট্টু তামিল সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটিকে তামিল সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই আয়োজন করা প্রয়োজন।
তামিলনাড়ুর আরেক বিখ্যাতজন সাবেক বিশ্বসেরা দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ। তিনি টুইটারে সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ‘শান্তির লক্ষ্যে একসঙ্গে জেগে উঠেছে আমার রাজ্য। তামিলনাড়ুর বাসিন্দা হয়ে আমি গর্বিত।’
শুধু রূপালি ও ক্রীড়াজগতের তারকারাই নন, আধ্যাত্মিক গুরু রবিশঙ্করও দাঁড়িয়েছেন পরম্পরা ধরে চলে আসা জাল্লিকাট্টু খেলার পক্ষে। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তামিলনাড়ুতে পঙ্গল সবচেয়ে বড় উৎসব। এমনকি দীপাবলি ও হোলির চেয়েও। আর এ খেলার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ জাল্লিকাট্টু। এই খেলা বন্ধ করা ঠিক হবে না।’
এ ছাড়া অভিনেতা কমল হাসানসহ বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রায় সবাই তামিলনাড়ুবাসীর এই আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।