সমঝোতা হচ্ছে নারী-শিশু পাচার ও জাল নোট রোধেও

ঢাকায় নরেন্দ্র মোদির দুদিনের সফরে নারী-শিশু পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পাশাপাশি গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে জঙ্গি দমন। গুরুত্ব পাচ্ছে জাল নোট রোধের বিষয়টিও।
মোদি-হাসিনার উপস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক ইস্যু এবং দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে যেমন নারী ও শিশু পাচার রোধে এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে, তেমনই দুই দেশের মধ্যে জাল নোটের কারবার ঠেকাতে ও সন্ত্রাস দমনে ঢাকার সঙ্গে ‘সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি’ হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের পক্ষে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে বলে জানা গেছে। চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশ জাল নোটের কারবার-সংক্রান্ত নথিবিনিময় ও সন্ত্রাস দমনের তথ্যবিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতায় অঙ্গীকারবদ্ধ হবে।
পাশাপাশি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ উপকূলবর্তী নিরাপত্তা এবং অপরাধ দমনেও চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে নারী ও শিশু পাচার রোধে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে নারী ও শিশু পাচার রোধ, তাদের উদ্ধার, প্রত্যর্পণ এবং পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
এর আগে ভারত-বাংলাদেশের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে নারী ও শিশু পাচার রোধে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের চতুর্থ বৈঠক গত ৬-৭ এপ্রিল মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সে বৈঠকেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নারী ও শিশু পাচার রোধে সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এবং সম্মতিতে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়।
অন্যদিকে, জাল নোট রোধ এবং জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে ভারতের এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ঘটনার তদন্তে নেমে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্যবিনিময় করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ গিয়ে দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাস দমন, নারী-শিশু পাচার এবং জাল নোটের কারবার ঠেকাতে বাংলাদেশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছিল এনআইএ। সে সময়ই ঠিক হয়, দুই দেশের স্বার্থে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পুরো বিষয়টি চুক্তির আকারে সম্পাদিত করা হবে।
তা ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জাল নোটের কারবার ঠেকাতে ২০১৪ সালে একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়। ২০১৪-এর জানুয়ারি মাসে সেই টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এনআইএ জানায়, সেই বৈঠকের পরেই বিষয়টি চুক্তির আকারে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরের অপরাধ দমন শাখার ডিআইজি এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন।
এনআইএ সূত্র আরো জানায়, পাকিস্তানের করাচি থেকে দুবাই হয়ে ভারতীয় জাল নোট ঢোকানো হচ্ছে ঢাকায়। তার পর সেখান থেকে সেই জাল নোট পশ্চিমবঙ্গের মালদহ-মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভারতে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে নারী ও শিশু পাচার রোধ এবং জাল নোটের কারবার ঠেকাতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তা কার্যকর করা যায়নি। তাই এবারে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তিতে মোদি-হাসিনার উপস্থিতিতে এ চুক্তি সম্পাদিত হতে চলেছে বলেই এনআইএ সূত্রের খবর।
আগামী ৬-৭ জুন মোদির ঢাকা সফরে বহুল প্রতীক্ষিত স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সই করতে যাচ্ছে দুই দেশ। এর মধ্যে দুই দেশের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেছে। এর ফলে দুই দেশের ভেতরে থাকা ছিটমহল বিনিময় হবে। একই সঙ্গে ছিটমহলবাসীরও দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটবে। বাংলাদেশ বা ভারত অন্তত যেকোনো এক দেশের নাগরিকত্ব তারা পেতে যাচ্ছে।