৮ লাখ ডলারের সমস্যা কীভাবে মেটাবে আফগান দূতাবাস ও তালেবান?
তাজিকিস্তানে আফগানিস্তান দূতাবাসের অ্যাকাউন্টের প্রায় আট লাখ মার্কিন ডলার ফেরত চেয়েছে তালেবান সরকার। কিন্তু, আফগান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জহির আগবার বলে দিয়েছেন—ওই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। সংবাদমাধ্যম দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট ও হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত জহির আগবার বলেন, ‘তালেবানের অর্থ ফেরত দাবি করার কোনো অধিকার নেই। কারণ, আফগান দূতাবাস ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের একটি সরকারি বিভাগ। এখানে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা হয়, যে সম্পর্কে তালেবানদের প্রশ্ন করার অধিকার নেই।’
তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে আফগান দূতাবাসে স্থানান্তরিত আট লাখ মার্কিন ডলার নিয়ে বিরোধের তথ্য কাবুল পাজওক সংবাদ সংস্থা প্রকাশ করেছিল। ওই সংস্থার মতে, সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির শাসনের শেষ দিনগুলোতে সাত লাখ ৮৬ হাজার ডলার ‘ভুলবশত’ দুশানবে-তে আফগান দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এখন তালেবান ওই অর্থ কাবুলে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করে দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছে।
পাজওক সংবাদ সংস্থা বলছে, ওই অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানান্তর করা হয়েছিল এবং পরে দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়।
আফগান রাষ্ট্রদূত জহির বলেন, ‘প্রথমত, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানকে স্বীকৃতি দিইনি। অন্যদিকে, আমাদের টাকা ফেরত চাওয়ার তালেবান কে? দুশানবে-তে আফগান দূতাবাস হলো আরেকটি ছোট আফগানিস্তান, যেখানে অনেক লোক বাস করে এবং এখানে কাজ করে। প্রায় ১০ হাজার আফগান দুশানবে-তে বাস করে। তাদের আমরা সাহায্য করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দূতাবাসের তলোয়ার তালেবানের বিরুদ্ধে ধারাল এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।’
পাজওক বলছে, বিপুল ওই অর্থ দূতাবাসের ব্যয়ে স্থানান্তর করে সাবেক আফগান সরকার। তবে, মুহম্মদ জহির আগবার আফগান সরকারের সাবেক উপপ্রধান আমরুল্লাহ সালেহের পরামর্শে দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অর্থ তুলে নেন।
পাজওক দুশানবে-তে আফগান দূতাবাসে তালেবানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৩১ জুলাই আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়, কূটনীতিক এবং স্থানীয় কর্মীদের বেতন ও স্বাস্থ্য বীমার জন্য ৮৭ হাজার ডলার ছাড়াও ভুলবশত সাত লাখ ৮৫ হাজার ৬২৮ ডলার স্থানান্তর করে।
তালেবান অর্থ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, অতিরিক্ত অর্থ ‘আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানান্তর করা হোক।’
আফগান দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাতে পাজওক লিখেছে, ‘আগের সরকারের শেষ দিনগুলোতে দূতাবাসের বেতন, বীমা এবং পরবর্তী তিন বছরের খরচের জন্য অর্থগুলো তাজিকিস্তানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।’
পাজওকের একটি সূত্রের মতে, দুশানবে-তে দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটি সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানান্তরিত সরকারি অর্থ। তাই আজ হোক বা কাল, দূতাবাস সক্রিয় হলে আগবার যেখানেই থাকুন, তাঁকে অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে।’
কাবুলের সংবাদপত্র আরও উল্লেখ করেছে, মুহাম্মদ জহির আগবার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তালেবানের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আগবার বলেছেন, ‘তালেবান শাসন ও তালেবানের চিঠি আমাদের জন্য আনুষ্ঠানিক নয়। তাজিকিস্তানের আফগান দূতাবাস আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্যত পরিচালনা করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুসারে এ দূতাবাস কাজ করে।’