হাত নেই জেসিকার, পা দিয়েই জয় করেছেন আকাশপথ
হাতবিহীন অবস্থায় জন্ম নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জেসিকা কক্স। মায়ের গর্ভে বিকশিত হয়নি তাঁর দুহাত। কিন্তু হাত না থাকলে কী হবে, পা দিয়েই বিমান চালিয়ে জয় করেছেন বিশ্ব, জয় করেছেন আকাশপথ। এরই মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পা দিয়ে বিমান চালানোয় পেয়েছেন লাইসেন্স। বাধা ছাড়াই এখন তিনি উড়াল দিতে পারছেন সীমানাহীন অন্তরীক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ৩৬ বছর বয়সী অদম্য এই নারীর অর্জন।
পা দিয়ে কী না করতে পারেন জেসিকা! বাজাতে পারেন পিয়ানো, চালাতে পারেন গাড়ি। এ ছাড়া মার্শাল আর্টেও জুড়ি নেই তাঁর, পেয়েছেন স্বীকৃতি। তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু পা দিয়ে বিমান চালানোর লাইসেন্স পাওয়া যেন সব অর্জনকেই ছাপিয়ে গেল।
জেসিকা কক্স এখন প্রতিবন্ধী সব মানুষের অনুপ্রেরণা। তিনিও বিশ্বাস করেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেকোনো বাধা পেরিয়ে সামনে এগোতে পারে।
জেসিকা বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় কোনো কিছুই জানা যায়নি। আমার জন্মের পর চিকিৎসকরা মা-বাবাকে জানালেন, হাতবিহীন অবস্থায় জন্ম নিয়েছে তাঁদের সন্তান। এরপরই বড় ধরনের ধাক্কা খায় আমার পরিবার।’
কেন মায়ের গর্ভে জেসিকার হাত বিকশিত হয়নি, তা এখনো রহস্য। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যামেলিয়া নামক একটি অবস্থার কারণে এমনটি ঘটেছে। অ্যামেলিয়া এমন একটি অবস্থা, যার কারণে এক বা একাধিক অঙ্গ বিকশিত হতে পারে না। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের সংখ্যাও খুব একটা দেখা যায় না। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে গর্ভাবস্থায় অথবা জন্মের পরপরই অনেক শিশুর মৃত্যু হয়।
ছোটবেলা থেকেই জেসিকা ছিলেন অদম্য। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় স্বাভাবিকভাবেই থাকার চেষ্টা করতাম। তবে অনেক সময় আমাকে বলা হতো, এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা আমি পারব না। কারণ, আমি প্রতিবন্ধী।’ জেসিকা জানান, সব সময় ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটির প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করেছেন তিনি।
কৃত্রিম হাত ব্যবহার করার উপায় থাকলেও সবক্ষেত্রে পা ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন জেসিকা কক্স।
আকাশপথ জয় করলেও ছোটবেলায় বিমানে চড়তে ভয় পেতেন জেসিকা। বিমানে ওঠার পর ভয় পেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন তিনি। তবে একটি ঘটনা পাল্টে দেয় জেসিকার জীবন।
একদিন ছোট একটি বিমানে উঠেছিলেন তিনি। ওই সময় পাইলট তাঁকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যান। কন্ট্রোল থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে জেসিকাকেই বিমানটি চালাতে বলেন তিনি। তবে ওই বিমানের দুটি নিয়ন্ত্রণ প্যানেল ছিল। এর পর থেকেই বিমানে চড়ার ভয় ধীরে ধীরে কমে যায় তাঁর।
জেসিকা বলেন, ‘যে বিষয়টিকে আমরা ভয় পাই, তাঁর মুখোমুখি হওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
২০০৫ সালে অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন জেসিকা। এর পর থেকে পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু সেটা মোটেই সহজ ছিল না জেসিকার পক্ষে। মূলত অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণেই সেই কঠিনকে জয় করতে পেরেছেন তিনি।
২০০৮ সালে ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ স্পোর্টস এয়ারক্রাফট চালানোর সার্টিফিকেট দেওয়া হয় জেসিকাকে। ওই সময় এটিই ছিল জেসিকার পক্ষে সবচেয়ে বড় অর্জন।
এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জেসিকা কক্সকে। এখন তিনি পুরো বিশ্বের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণা। আর এ জন্যই অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যান তিনি। অনুপ্রাণিত করেন অনেক মানুষকে, যাঁরা কি না জেসিকার মতোই ইচ্ছাশক্তির ফলে জয় করতে পারবেন সব কাজ।