সৌদি আরব ও আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শাসনকালের শেষ পর্যায়ে দেশ দুটির সঙ্গে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছিলেন। সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এই স্থগিতাদেশ নিয়মিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অংশ। রীতি অনুযায়ী, নতুন প্রশাসন এসে আগের প্রশাসনের বড় ধরনের অস্ত্র চুক্তির সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখে। তাই সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখছে বাইডেন প্রশাসন। তারপর ঠিক হবে, অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে, না কি তা বাতিল হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দুই হাজার তিনশ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে ৫০টি লকহিড-মার্টিন এফ৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছিল আরব আমিরাত। গত ৬ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আরব আমিরাতের সঙ্গে এই চুক্তি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন এসব যুদ্ধবিমান রাডার কিংবা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ফাঁকি দিতে সক্ষম।
এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন গত ২৯ ডিসেম্বর সৌদি আরবের কাছে ২৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তিন হাজার ‘প্রিসিশন গাইডেড মিসাইল’ (ক্ষেপণাস্ত্র) বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। সেই চুক্তিটিও বাইডেন প্রশাসনের স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন সে সময়ই সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাইডেনের বক্তব্য ছিল, এসব অস্ত্র ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের দমন করার কাজে ব্যবহার করা হবে।
ট্রাম্প অবশ্য বাইডেনের সেই আহ্বানে কান দেননি। তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, এই অস্ত্র বিক্রিকে সামনে রেখেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির কয়েকটি চুক্তিতে বাগড়া দেয় মার্কিন কংগ্রেস। চুক্তিগুলোতে অনুমোদন না দিয়ে কংগ্রেস জানায়, এই ধরনের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি আগে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কংগ্রসের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেন ট্রাম্প। আইনপ্রণেতাদের হতাশ করে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করাকে জাতীয় জরুরি সিদ্ধান্ত জানিয়ে কংগ্রেসের পর্যালোচনা ছাড়াই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর চেষ্টা চালান।
সে সময় ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মার্ফি বলেছিলেন, “ট্রাম্প জানেন, কংগ্রেস (অস্ত্র বিক্রির) সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবে না। তাই তিনি এই ফাঁক-ফোঁকরের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অস্ত্র বিক্রি করতে চেয়েছেন। এখন সৌদি আরবের কাছে ইয়েমেনে ফেলার জন্য বোমা বিক্রি করার মতো কোনো ‘জরুরি’ কারণ নেই। এমন কিছু (অস্ত্র বিক্রি) করা হলে তা ইয়েমেনে সৃষ্ট মানবতার সংকট আরো প্রলম্বিত করবে।”
ট্রাম্প আমলের আর কোন কোন চুক্তি খতিয়ে দেখা হতে পারে, তা বিস্তারিত জানায়নি বাইডেন প্রশাসন।