সিএএ নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ জাতিসংঘ, প্রতিবাদ দিল্লির
দুই মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে চাপ বাড়ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সিএএ মামলায় তৃতীয় পক্ষ বা ‘অ্যামিকাস কিউরি’ হিসেবে শামিল হতে চেয়ে আবেদন করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-সংক্রান্ত হাইকমিশনার ভেরোনিকা মিশেল বেচেলেট জারিয়া। ইউএনএইচআরসি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে বলেছে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব আইনে যে বিভাজন করা হয়েছে, তা যথাযথ যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
ইউএনএইচআরসির আবেদনের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছে ভারত। দেশটি জানিয়েছে, বিষয়টি একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ। ভারতের পার্লামেন্টের আইন তৈরির সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। তাই কোনো বিদেশি পক্ষের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভিশ কুমার বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ আইন ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, কোনো বিদেশি পক্ষের ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে নাক গলানোর অধিকার নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে সিএএর সাংবিধানিক বৈধতা রয়েছে। আমাদের সংবিধানের মূল্যবোধের সঙ্গে আইনটি সংগতিপূর্ণ। দেশভাগের পর মানবাধিকার-সংক্রান্ত যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বা প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেগুলোকে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদা দিই। দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থায় আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। (আমাদের) আত্মবিশ্বাস রয়েছে যে আমাদের শক্তিশালী এবং আইনানুগ অবস্থানে সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন দেবেন।’
এদিকে ইউএনএইচআরসির পক্ষ থেকে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থাটির সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোতে বহুসংখ্যক আহমদিয়া, হাজারা ও শিয়া আছেন, যাঁরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও সেখানে সংখ্যালঘু। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে ইউএনএইচআরসি প্রশ্ন রাখে, সিএএর প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ওইসব সংখ্যালঘু মুসলিমের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি কীভাবে দেখা হচ্ছে। ইউএনএইচআরসির এই প্রশ্নের কোনো জবাব এখনো দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের আবেদন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একাধিক মতামত রয়েছে। তবে আইনি প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, জাতিসংঘ সরাসরি এই মামলায় শামিল হতে চাওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় চলে এলো মোদি সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইন।