‘যতদিন আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র পেতে দেব না’

ইরান তাদের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার জবাবে ইরাকে মার্কিন ও যৌথ বাহিনীর দুটি সেনাঘাঁটিতে এক ডজনের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রশাসনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ওই ‘৮০ জন মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসন জানায়, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো সেনার প্রাণ যায়নি। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, হামলায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে তা খুবই সামান্য।
ইরানের হামলার পর গতকাল বুধবার সকালে হোয়াইট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন ট্রাম্প। ভাষণে হামলার বদলা নেওয়ার কোনো হুমকি দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা বাদ দেয় এবং সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে, তাহলে শান্তি স্থাপনেও তিনি প্রস্তুত। এ ছাড়া ইরান আর কোনো নতুন স্থানে হামলার পরিকল্পনা করছে না, এমন খবরকে স্বাগত জানান ট্রাম্প।
তবে একই সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যতদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রয়েছি, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে দেব না।’ ইরানের আচরণ না বদলানো পর্যন্ত দেশটির ওপর আরো শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো দাবি করেন, ইরানের হামলায় কোনো মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়নি। ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ট্রাম্প আরো বলেন, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য মার্কিন সেনারা তৈরি হয়েছে।
এর আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটে বলেন, ‘সব ঠিকঠাক আছে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানঘাঁটিতে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই আছে।’
এদিকে ইরাকে দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, গত মঙ্গলবার ইরানের তিনটি স্থান থেকে ইরাকে ১৬টি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মার্ক এসপারের পাশে ছিলেন মার্কিন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান মার্ক মিলে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ইরানের ছোড়া ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১১টি আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে এবং অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইরবিল ঘাঁটির কাছে এসে পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তাঁবু, বিমান চলাচলের পথ, গাড়ি পার্কের স্থান ও একটি হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে বলেও জানান মার্ক এসপার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান মার্ক মিলে জানান, সামরিক সরঞ্জাম, যানবাহন ও বিমান ধ্বংস করতে এবং সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান।
মার্ক মিলে বলেন, ‘যা দেখেছি এবং যা জানতে পেরেছি, তাতে আমার বিশ্বাস, তারা (ইরান) অবকাঠামোর ক্ষতিসাধন, যানবাহন ও বিমান ধ্বংস করা এবং সেনা হত্যা করতে চেয়েছিল।’ এ সময় মার্ক মিলে দাবি করেন, মার্কিন সেনারা সময়মতো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ন্যূনতম।
ইরানের হামলার পর গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছিল, ইরাকে মার্কিন ও জোট বাহিনীর অন্তত দুটি ঘাঁটিতে এক ডজনের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ওই হামলা চালানোর দাবি করে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পস জানায়, মার্কিন হামলায় জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার জবাবে ইরাকে ওই হামলা করা হয়েছে।