ভারতে একাধিক বাংলাদেশিকে পাঠানো হলো কোয়ারেন্টিনে

ভারতের রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় আলামি মারকাজ মসজিদে তাবলিগ-ই-জামাতে অংশ নেওয়া একাধিক বিদেশিকে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার। জানা গেছে, করোনা সন্দেহে মহারাষ্ট্রের পুলিশ ১৩ জন বাংলাদেশি এবং আটজন মালয়েশীয় নাগরিককে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে।
মহারাষ্ট্রের থানে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ২১ জন বিদেশি থানে জেলার মুম্বার কৌসা এলাকার তানভির-আল-উলম মসজিদে আত্মগোপন করেছিলেন। চলতি বছরের গত মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়ার পর নাবি মুম্বাইয়ের তাবলিগ জামাতে অংশ নেন তাঁরা সবাই। এরপর মুম্বা এলাকার ওই মসজিদের একটি ঘরে গাদাগাদি করে অবস্থান করছিলেন তাঁরা।
থানে পুলিশের কর্মকর্তা এস এস বার্সে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল, কিছু বিদেশি নাগরিক মুম্বা এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এরপর অভিযান চালিয়ে জানতে পারি, ১৫ দিন ধরে কৌসার মসজিদে ওই বিদেশিরা ছিলেন। আমরা প্রথমে ১৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকের খোঁজ পাই। পরে আটজন মালয়েশিয়ার নাগরিককেও পাওয়া যায় ওই মসজিদ থেকে।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থানে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের চিকিৎসকেরাও ছিলেন। তাঁরা উদ্ধার করা বিদেশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। তাঁরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা করতে ওই বিদেশিদের লালারস এবং অন্যান্য নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।’
অন্যদিকে, ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বদোহি জেলার হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। বদোহির একটি গেস্ট হাউসে ওই বাংলাদেশিদের রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর কারণে কামালুদ্দিন আনসারি নামের তাবলিগ জামাত মারকাজ কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, ওই ১১ বাংলাদেশি তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়ার পর গত ৪ মার্চ বদোহিতে আসেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা প্রত্যেকেই ভিসার নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন।
চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত দিল্লির নিজামুদ্দিনে চলা ওই তাবলিগ-ই-জামাতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ। এরপর গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠান শেষের পরেও নিজামুদ্দিন এলাকাতে থেকে যান অনেকেই। গত ২৩ মার্চ ভারতজুড়ে জনতা কারফিউর আগেরদিনই ওই মসজিদে ছিলেন প্রায় এক হাজার ৭৪৬ জন। যাঁদের মধ্যে ২০০ জনের মতো ছিলেন বিদেশি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, কেবল নিজামুদ্দিনেই নয়, গত ১ জানুয়ারি প্রায় দুই হাজার বিদেশি ভারতে এসেছিলেন। তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওই জামাতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা মিলেছে। এরই মধ্যে সাতজনের মৃত্যুও হয়েছে। আর তার পই নিজামুদ্দিনের ওই মসজিদের ঘটনা সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এক সপ্তাহ আগেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলোকে চিঠি দিয়ে জানায়, তাবলিগ জামাতে শামিল সব মানুষকে চিহ্নিত করে তাদের পুরো শরীর স্ক্রিনিং করাতে হবে। ওই ব্যক্তিরা অন্য কারো সংস্পর্শে এসেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়। যদিও সে সময় ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যই এ বিষয়ে তেমন সক্রিয়তা দেখায়নি। পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই বিভিন্ন রাজ্যে জোরদার অভিযান শুরু হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমান, ওই জামাতে অংশ নিতে আসা বিদেশিরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৭০টি দেশের আনুমানিক দুই হাজার বিদেশি নাগরিক পর্যটন ভিসা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাবলিগ জামাতের কাজে যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন বাংলাদেশের ৪৯৩ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৪৭২, মালয়েশিয়ার ১৫০ এবং থাইল্যান্ডের ১৪২ জন। তাঁদের প্রত্যেকের ভিসার মেয়াদ ছয় মাস। সে ক্ষেত্রে কোনো বিদেশিদের শরীরে করোনার উপসর্গ আছে কি না, তা জানতে স্ক্রিনিং করানো হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে। যদি দেখা যায়, কারো শরীরে করোনাভাইরাসের নমুনা নেই, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে উড়োজাহাজ চলাচল চালু হলে প্রথম ফ্লাইটেই স্বদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ওই চিঠিতে আশঙ্কা করা হয়েছে, তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া বিদেশি টিমের সদস্যরা করোনাভাইরাসের বাহক হিসেবে ভারতের ভেতরে নানা জায়গায় ঘুরে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারেন। তা অবিলম্বে আটকাতে হবে। সব মিলিয়ে নিজামুদ্দিনের বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার কঠোর মনোভাব নিয়েছে।
ভারতে ট্যুরিস্ট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক কোনো ধর্মীয় মতবাদ প্রচার, ধর্মীয় স্থানে বক্তৃতা দেওয়া, ধর্মীয় মতধারা নিয়ে অডিও বা ভিডিও কিংবা পুস্তিকা বিলি করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া বিদেশিরা ভিসার নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন বলে ভারত সরকারের অভিযোগ। এ পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেয়, তাবলিগ জামাতের কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, এমন কোনো ব্যক্তিকে যেন পর্যটন ভিসা না দেওয়া হয়।