বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি বড় হ্রদ শুকিয়ে যাচ্ছে : গবেষণা
বিশ্বের মধ্যে থাকা বৃহৎ হৃদগুলোর অর্ধেকের বেশিই শুকিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯০ দশকের শুরু থেকে সরু হয়ে যাচ্ছে জলাধারগুলো। এর জন্য প্রধানত দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। এ ছাড়া, কৃষিকাজের জন্য হ্রদের পানির ব্যবহার, জলবিদ্যুৎ ও মানুষের অনবরত ব্যবহারের জন্য সংকুচিত হচ্ছে এগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিঠা পানির উৎস হিসেবে পরিচিত হ্রদগুলোর মধ্যে কয়েকটি গত তিন দশকের প্রতি বছরে ২২ গিগাটন করে পানি হারিয়েছে। এই পানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ হ্রদ, লেক মিডের মোট পানির ১৭ গুণ বেশি।
এই গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার সারফেস হাইড্রোলজিস্ট ফ্যাংফ্যাং ইয়াও। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি। ফ্যাংফ্যাং ইয়াও বলেছেন, ‘জলবায়ুর উষ্ণায়ন ও মানুষের ব্যবহার জন্য ৫৬ শতাংশ প্রাকৃতিক হ্রদ সংকুচিত হয়েছে।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘সাধারণত জলবায়ু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলো আরও শুষ্ক হয়ে উঠবে এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলো আরও আর্দ্র হয়ে উঠবে। তবে, গবেষণায় আর্দ্র অঞ্চলেও উল্লেখযোগ্য মিঠা পানির ক্ষতি দেখা গেছে। এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়।’
স্যাটেলাইট থেকে তোলা দুই হাজার হ্রদের ছবির ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা চালানো হয়। ছবিগুলো দেখে তারা বুঝেছে যে, মানুষের ব্যবহার, বৃষ্টিপাতে পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বিশ্বব্যাপী হ্রদের পানির স্তরকে আরও নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত হ্রদের পানি কমেছে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ হ্রদ লেক বাসিনকে ঘিরে বাস করে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। তবে, ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে হ্রদটি। এতে করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে হ্রদটির চারপাশে থাকা অনেক অঞ্চল।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপর্যয়কর পরিণতি এড়াতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, সেজন্য অনেক আগে থেকে আওয়াজ তুলছে বিজ্ঞানীরা ও পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। বর্তমানে বিশ্ব প্রায় এক দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণ হচ্ছে। এমনকি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা সর্বোচ্চ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমও।