দেশ যখন পুড়ছে, অসি প্রধানমন্ত্রী তখন হাওয়াই অবকাশে

‘রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’—বিখ্যাত এই প্রবাদবাক্য অনেকেরই হয়তো জানা। ঠিক হুবহু না হলেও অনেকটা এমনই ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবকাশযাপন করতে গিয়েছিলেন অসি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। ওদিকে ভয়াবহ দাবানলে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। দাবানল ও তীব্র গরমে পরিস্থিতি যখন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে, ঠিক সে সময় দেশের প্রধানমন্ত্রীর না বলেকয়ে অবকাশযাপনের ব্যাপারটা মোটেও মেনে নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়াবাসী। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় স্কট মরিসনকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কড়া ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন নেটিজেনবাসী। জনরোষের মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে অসি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ছুটি সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন তিনি।
এখনো ১০০টির বেশি দাবানল নেভাতে লড়ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। গরম বাতাসের প্রভাবে এর মধ্যেই অস্ট্রেলিয়াবাসী কাটিয়েছে দেশের ইতিহাসের উষ্ণতম দুই দিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সিডনির নিকটবর্তী একটি এলাকায় বড় এক দাবানল নেভানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন স্বেচ্ছাসেবী।
ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা হজম করার পর আজ শুক্রবার অসি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন সময়ে আমি সপরিবারে ছুটি কাটাতে যাওয়ায় ভয়ংকর দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়াবাসীর কেউ যদি দুর্ভোগের শিকার হন, তার জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

গত সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের জেরে আটজন নিহত হয়েছেন। সাতশর বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, পুড়ে গেছে লাখ লাখ হেক্টর ভূমি।
কেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর খেপেছেন অস্ট্রেলিয়াবাসী?
চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমসূত্রে খবর পাওয়া যায়, অঘোষিত ছুটিতে আছেন স্কট মরিসন। গুজব রটে, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বেড়াতে গেছেন অসি প্রধানমন্ত্রী। এর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে টুইটারে মরিসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জ্ঞাপন করতে থাকেন নেটিজেনরা। এরই মধ্যে প্রচণ্ড গরম বাতাসে নাকাল হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়াবাসী। বাতাসের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দাবানলের তীব্রতাও। এতে করে দাবানল নেভাতে হিমশিম খেতে হয় অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের। আগুনের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে প্রধানমন্ত্রীর কথিত ছুটি নিয়ে জনরোষ।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ান অসি সরকারের মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রীর ছুটিকে ‘যথাযথ’ বলে দাবি করেন তাঁরা। তবে প্রধানমন্ত্রী কোথায় গেছেন, সে বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমকে বলা হয়, মরিসনের হাওয়াইতে অবস্থানের তথ্যটি ‘সঠিক নয়’।
এমন পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার মরিসন রেডিও স্টেশন টুজিবিকে নিশ্চিত করেন, পরিবারসমেত হাওয়াই ছিলেন তিনি। তবে তিনি জানান, দেশের দাবানল ও তাপমাত্রা-সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিতই খোঁজখবর রেখেছেন। এ ছাড়া গত সপ্তাহে নিউজিল্যান্ডে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ অস্ট্রেলীয়র প্রাণহানির বিষয়টিও তাঁর মাথায় ছিল।
এক বিবৃতিতে মরিসন বলেন, ‘উদ্ভূত বেদনাদায়ক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আমি যত দ্রুত সম্ভব সিডনিতে ফিরব।’
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে মরিসন ও তাঁর সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না—এমন অভিযোগ অনেক অসি নাগরিকের। এ ছাড়া দাবানলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ রয়েছে কি না, এ নিয়েও কথা বলতে অনিচ্ছুক অসি সরকার। এ নিয়েও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছেন অস্ট্রেলিয়াবাসী।