করোনা সংক্রমণে উহানের বাজারের ভূমিকা ছিল : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি পাইকারি বাজারের অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর। বলা হচ্ছিল, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল ওই বাজার থেকেই। এত দিন এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। কিন্তু গতকাল শুক্রবার এই প্রথম সংস্থাটি জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে উহানের ওই বাজারের ভূমিকা রয়েছে।
গত বছরের শেষভাগে শুরু হয়েছিল করোনা সংক্রমণ। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে উহানের জীবজন্তুর মাংসের ওই বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় চীন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. পিটার বেন এমবারেক গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে উহানের বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিল, তা এখনো আমরা পরিষ্কার জানি না। হতে পারে সংক্রমণ কয়েকগুণ ছড়ানোর উপকরণ ওই বাজারে মজুদ ছিল। আবার এও হতে পারে, এটা শুধুই কাকতালীয়।’
ড. পিটার বেন জানান, এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না যে জীবজন্তু থেকেই ওই বাজারের দোকানদারদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১২ সালে সৌদি আরবে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। গবেষকদের প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল উৎস খুঁজে পেতে। উটের শরীরই যে ভাইরাসের আধার, তা বুঝতে সময় লেগেছিল ১৪ মাস।’
অনেকেই মনে করেন, বাদুড় বা ওই জাতীয় প্রাণীর শরীর থেকেই করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়েছে। এ ছাড়া চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, গবেষণাগারে তৈরি করে এ ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, উহানের ভাইরোলজি ল্যাবেই এ ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একই অভিযোগ করেন বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। যদিও এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ল্যাবেই যে করোনাভাইরাস তৈরি হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, করোনার উৎস সন্ধানে আবারও একটি টিম চীনের উহানে পাঠাতে চায় তারা। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিমকে সব সাহায্য করবে। তারাও চায় এ বিতর্কের একটা উপসংহার টানা হোক।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুটি জিনিস খুঁজে বের করা। এক, কোনো প্রাণীর শরীর থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে কি না এবং দুই, ছড়ালে কীভাবে তা মানব শরীরে প্রবেশ করল।
করোনা সংক্রমণে যে উহানের বাজারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে, তা দুনিয়াশুদ্ধ লোক বললেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এত দিন স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি। অনেকের বক্তব্য, পৃথিবীর একাধিক রাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ ‘চীনের সুরে কথা বলা’কে ভালোভাবে নেয়নি। সংস্থাটিতে মার্কিন অনুদান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল। অনেকের মতে, সে চাপের ফলেই এত দিন পর উহানের বাজারের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।