স্টক এক্সচেঞ্জ ও আইসিবির সংস্কার জরুরি : ডিবিএর সভাপতি
পুঁজিবাজার যেখানে এগিয়ে যাওয়া কথা ছিল। সেভাবে এগিয়ে না এসে বরং পুঁজিবাজার খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে স্টক এক্সচেঞ্জ ও আইসিবির সংস্কার জরুরি বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি এ বিষয়ে আইসিবি চেয়ারম্যান ও স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আজ শনিবার (২ নভেম্বর) ডিবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের বর্তমানে প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাইফুল ইসলাম এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানী ভূইয়া।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পরে ড. ইউনূস সরকারের কাছে পুঁজিবাজার নিয়ে বিশেষ প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশায় সাড়া মেলেনি। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বর্তমান সরকারের কাছে এদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।
সভায় সিএমজেএফের সভাপতি গোলাম সামদানি বলেন, বর্তমান কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু বিএসইসিতে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। যাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বরং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পরামর্শে কাজ করে বর্তমান কমিশন।
মার্জিন ঋণ ও ফোর্স সেলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা জানিয়ে গোলাম সামদানি বলেন, মার্জিন ঋণের কারণে বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হচ্ছে। তাই ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান পুঁজিবাজারের দিন ভালো যাচ্ছে না। তাই যারা পুঁজিবাজার সম্বন্ধে ভাল বোঝেন, পরিসংখ্যান করতে পারেন এবং প্রাথমিক পুঁজিতে লাভবান হয়েছেন, এমন বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ মার্জিন ঋণ নিয়ে যারা লোকসানে যাচ্ছে, তাদের পুঁজি এক জায়গা আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সিকিউরিটিজের কাছে বকেয়া জমা হচ্ছে। এক পর্যায়ে হাউজগুলোর অর্থ প্রয়োজনে লোকসানের শেয়ারগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
নিরীক্ষকদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই জানিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, নিরীক্ষকরা জেনে বুঝে ভুয়া আর্থিক হিসাব তৈরি করে। একই সঙ্গে সঠিক বলে সত্যায়িতও করছে। এসব অনিয়ম নিয়ে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না।
সাংবাদিক সুজয় মহাজন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি যেসব জরিমানা করেছে, যা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে কমিশনের আদায় করার ক্ষমতা আছে কিনা, সেটাও দেখার বিষয়। বিনিয়োগকারীরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে।
সাংবাদিক আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, দেশে বিনিয়োগ করার মতো বিনিয়োগকারী আছে। কিন্তু বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।
বিএসইসি বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের যোগ্যতা শূন্য জানিয়ে সাংবাদিক মনির হোসেন বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের প্রেক্ষাপটে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। বিএসইসিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিলে ডিবিএসহ সবাই প্রশংসা করে। আর বিদায় নিলে সমালোচনা করে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমালোচনার কাজ করলে, ক্ষমতায় থাকাকালীনই কমিশনের সমালোচনা করতে হবে। তাহলে সুফল পাওয়া যাবে।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের সবাই পুঁজিবাজার নিয়ে অভিজ্ঞ না জানিয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের রেগুলেটর বলেছে ডিএসইর সমস্যা আছে। আমিও বলি আছে। তবে বর্তমান পর্ষদ একসঙ্গে কাজ করছে। আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার মতো পদ খালি রয়েছে। এগুলো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন।
এতে অংশগ্রহণ করেন আইসিবি চেয়ারম্যান আবু আহমেদ, অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, আহসান হাবিব প্রমুখ।