আরাফাতে ইবাদত-প্রার্থনায় নিমগ্ন লাখো হাজি

হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পবিত্র আরাফাত পর্বতের চূড়ায় ও ময়দানে হাজিরা নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়া মোনাজাত করছেন। প্রচণ্ড তাপমাত্রা উপেক্ষা করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য চোখের পানি ঝরাচ্ছেন হাজিরা।
ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানেই ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর শেষ খুতবা দিয়েছিলেন। লাখ লাখ হাজি আজ বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার আগেই পাহাড় ও আশপাশের সমভূমিতে জড়ো হতে শুরু করেন।
যদিও কেউ কেউ সকালের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়ার সুযোগ নিতে আগেভাগেই আরাফাতে পৌঁছেছেন। প্রচণ্ড রোধের মাঝেও রঙিন ছাতা হাতে নিয়ে বহু হাজি আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকবেন।
সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফাত ও তাঁবুর শহর মিনার মাঝামাঝি মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে তারা নুড়ি সংগ্রহ করবেন, যা প্রতীকীভাবে ‘শয়তানের উদ্দেশে ছুড়ে মারবেন’।
হজের জন্য সৌদি আরবে আগত ১৫ লাখ হজযাত্রীর একজন পাকিস্তানের ৩৩ বছর বয়সী আলী। তিনি বলেন, “এটা আমি প্রতি বছর হজের সময় টিভির পর্দায় দেখতাম এবং সবসময় ভাবতাম—‘আমি যদি এখানে থাকতে পারতাম’।”
আলী আরও বলেন, ‘আমি গত তিন বছর ধরে এখানে আসার চেষ্টা করছি।‘ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব ধন্য বোধ করছি।’
আলীর মতোই সাদা পোশাক পরিহিত শত শত হজি পাহাড়ের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অনেকে প্রার্থনা করছিলেন অথবা ছবি তুলছিলেন।
সৌদি আরবের মক্কায় শুরু হওয়া বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক ধর্মীয় জমায়েত হজে সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানরা একত্রিত হয়েছেন। দেশটিতে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।
সিরিয়ার ৫৪ বছর বয়সী আদেল ইসমাইল বলেন, ‘আমি এখানে রোদ এড়াতে তাড়াতাড়ি এসেছি এবং পরে আমি আমার তাঁবুতে নামাজ পড়ব।’

এ বছরের হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন আরও নিরাপদ করার জন্য, সৌদি কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো সম্প্রসারণ করেছে। এ ছাড়া হাজার হাজার অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন এবং ভিড় আরও ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করতে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে তারা।
আনন্দের অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ইমান আবদেল খালেক বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে হজ পালন করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে আরাফাতে পৌঁছানোর সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
৫০ এর কোঠার ওই নারী পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বলেন, ‘এটা আমার কাছে একটা বড় স্বপ্ন, যা বাস্তবায়নের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম।’