ঢাবিতে ইংরেজি বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পূণর্মিলনী
কেউ ক্যাম্পাস ছেড়েছেন দেশ স্বাধীনের পূর্বে। কেউ আবার দুই-তিন বিছর আগে। কারো চাকরি জীবন শেষ কেউবা করলেন শুরু। মিলনমেলায় এসে সবাই যেন ফিরে গেলেন বহু বছর আগের সেই ক্যাম্পাস জীবনে।
নাগরিক জীবন ও কর্মজীবনের ব্যস্ততার মাঝে একসময়ের সহপাঠীদের সান্নিধ্য পেতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা। ক্যম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ, আর আড্ডা-গানে কাটল তাদের একটি বিকেল।
ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট অ্যালামনাই সোসাইটির (ইডাস) এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় শুক্রবার বিকাল ৩ টায়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন বিকাল ৩টা থেকেই। একের পর এক দেখা মেলে পুরানো দিনের বন্ধুদের। অনেক দিন পর প্রিয় বন্ধুকে সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই।
অনুষ্ঠান চলাকালে দেখা যায়, গেইটে প্রবেশে করেই প্রিয় বন্ধুদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে, আবার হাত মেলাচ্ছেন কেউ। কেউ আবার চিনতেও পারছে না বহু বছর আগে সাক্ষাৎ হওয়া সেই সহপাঠীকে, যার সাথে প্রতিনিয়ত একই শ্রেণিতে করত ক্লাস। কেউ কেউ নিজেদের পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করে একে অন্যকে খোঁচা দিচ্ছেন, হাসিতে মেতেছেন সবাই। পুরোনো বন্ধুদের সাথে নতুন করে স্মৃতি ধারণ করছেন মোবাইলে, ক্যামেরায়। কেউ কেউ বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন পুরনো বন্ধুকে অনেক বছর পর আবার দেখার আশায়।
এমনই একজন নাসিম জামিল জয়। তিনি বলেন, আমি ২০০০ সালের ব্যাচের ছিলাম। তুর্কিতে থাকা হয়। ব্যস্ত জীবনযাপনের কারণে বন্ধুদের সাথে তেমন যোগাযোগ হয় না। প্রায় ২০ বছর পর সকলের সাথে মিলিত হতে পেরে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি।
২০০১ ব্যাচের দীপক অধিকারী বলেন, চাকরির তাগিদে সিলেটে থাকতে হয়। একঘেয়েমি জীবন যাপন থেকে বের হয়ে প্রতি বছর আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করি। এতে করে দেশ-বিদেশে কর্মরত ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে সাক্ষাৎ করার একটা দারুণ সুযোগ তৈরি হয়। এই যে কাজল কিশোর ব্যানার্জি স্যার, তাহমিনা ম্যাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জল মিয়ার মত অসাধারণ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করার একটা দারুণ মুহূর্ত তৈরি হয়েছে, তাদের একটা কথা জীবনবোধকে বদলে দিতে পারে। প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি।
১৯৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থী, প্রফেসর তাজিন আজিজ বলেন, এই প্লাটফর্মটি খুবই কার্যকরী হয়ে উঠেছে। বড়দের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। পাশাপাশি এই প্লাটফর্ম থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। মেধাবী অসচ্ছল প্রায় সবাই বৃত্তির আওতায় চলে আসছে। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা আর্থিক সহায়তা, ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ খুবই আন্তরিকতার সাথে প্রদান করে থাকেন।
মিলন মেলার অংশ হিসেবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন,এখন আমরা যখন ব্যাচের দিকে তাকাই অবাক হয়ে যাই। আমরা পাশ করেছিলাম ১৯৬৫ সালে। আমার জীবনে দূর্বিষহ হলো সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের মতো মানুষকে সহ্য করার পাশাপাশি পেয়েছি সিরাজুল ইসলাম স্যারকে। আরো অসহ্য ছিলো সাজ্জাদ হোসেনের টিউটোরিয়াল ক্লাসের ছাত্র হওয়া। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের চার বছর। ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা। আমি চাইব যেন বিদেশি ভাষা চর্চার পাশাপাশি আমরা আমাদের দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চাও করব। সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন,আমার জানামতে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি দেয়া এবং বিভাগে বিভিন্ন অবদান রাখার মাধ্যমে আমাদের এখানে ভুমিকা রাখার সুযোগ আছে।
এরপর তিনি বাৎসরিক ৫০০ টাকা হারে চাঁদা প্রদানের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন তার বক্তব্যে। যার একটি অংশ বৃত্তি আকারে প্রদান করা হবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে।
আলোচনা পর্বে বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থী বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক ড. নিয়াজ জামানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এসময় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একক ও দলীয় গান, নৃত্য পরিবেশন করেন। এই পর্ব শেষে রাতের খাওয়ার পর মিলন মেলায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র।