হরগঙ্গা কলেজে আবাসন সংকট, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
আবাসন সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই কলেজে মাত্র একটি ছাত্রাবাস। আসন ১০০টি। ছাত্রাবাসের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় অর্ধেক আসনই ফাঁকা।
শিক্ষার্থীরা ওই ছাত্রাবাসটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কলেজের প্রথম নির্মিত বর্তমানে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটি ভেঙে সেখানে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বাবা হারাধন গাঙ্গুলী ও মা গঙ্গামনির নামের সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষানুরাগী আশুতোষ গাঙ্গুলী ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন হরগঙ্গা কলেজ। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় ছাত্রছাত্রী ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে থাকে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য কলেজ প্রাঙ্গণে ১৯৪০ সালে একটি তিনতলা ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার করা এবং সংস্কারের উদ্যোগ না থাকায় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ছাত্রদের হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত ভবন সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর অনুমোদন দেয়নি। ফলে দীর্ঘ আট বছরেও ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে আটকে আছে নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজ।
এ দিকে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজের শহীদ জিয়াউর রহমান ছাত্রাবাসের অবস্থাও শোচনীয়। ১০০ আসনের এ ছাত্রাবাসের প্রায় সব দেয়াল স্যাঁৎসেঁতে, বাথরুমের বেসিন ভাঙা, দরজা ভাঙা, গুমট হলরুম, পানি সংকট, অপরিচ্ছন্ন নোংরা টয়লেটসহ নানা সমস্যা রয়েছে।
ছাত্রাবাসে জায়গা না পেয়ে ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ছাত্রদের বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে মেসে। এতে তাঁদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।
হরগঙ্গা কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রাসেল আহমেদ রাজ থাকেন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২০১ নম্বর কক্ষে। এনটিভি অনলাইনকে রাসেল বলেন, ‘পুরো ছাত্রাবাস থাকার অনুপযোগী। বাথরুমে পানি নেই। আরো নানা সমস্যা রয়েছে। ছাত্রদের জন্য নতুন হল এখন সময়ের দাবি।’
এই প্রসঙ্গে রাসেল আরো বলেন, ‘দেখেন প্রায় ১০ বছর ধরে হলটি পরিত্যক্ত হয়ে আছে। ওই হলটাই তো ভেঙে নতুন করে করতে পারে।’
কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. ইলিয়াস মিয়া জানান, কলেজে ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। চরম আবাসন সংকট চলছে। একমাত্র ছাত্রাবাসে ১০০ সিট আছে। কিন্তু পরিবেশ না থাকায় অর্ধেক ছাত্রও থাকেন না। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা কলেজের আশপাশের বাড়ি বা মেসে থাকেন।
ইলিয়াস আরো জানান, জিয়াউর রহমান ছাত্রাবাসে যাওয়ার একটাই মাত্র রাস্তা। ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের পাশ দিয়ে যেতে হয়। ফলে যেকোনো সময় ভূমিকম্প হলে শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন।
কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. শাকিল বলেন, ‘আমাদের কলেজের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু থাকার জন্য একটাই ছাত্রাবাস। এই ছাত্রাবাসে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। টিভি রুমের টিভি চার মাস ধরে নষ্ট। পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে রাতে বহিরাগতরা ঢুকে মাদক সেবন করে।’
এদিকে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস ভবনের পাশের রাস্তার ধারে অবস্থিত এক দোকানি জানান, কিছুদিন আগে ভূমিকম্প হওয়ার সময় পুরো ভবনটি দুলতে থাকে। তারা ভবনের পাশ থেকে সড়ে মাঠে অবস্থান নেন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত ভবনটি ভেঙে ফেলার দাবি জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে সরকারি হরগঙ্গা কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. সাহেদুল কবির এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর কলেজে পুরাতন পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটি অপসারণ প্রয়োজন।
উপাধ্যক্ষ বলেন, ১৯৪০ সালে নির্মিত পুরাতন ছাত্রাবাসটি ২০০৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সাল থেকে বারবার চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করার পর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ছাত্রাবাস ভাঙার বিজ্ঞপ্তি বা টেন্ডার দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমতি না পাওয়ায় পরিত্যক্ত ভবনটি ভাঙা সম্ভব হয়নি।
এই প্রসঙ্গে সাহেদুল কবির বলেন, ‘২০১৩ সালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একাডেমিক কাম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তাঁর কাছে সে সময় ভবন ভাঙার আবেদন করি। মন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে ভবন ভাঙার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। সে সময় ভবনটি অপসারণ করার জন্য কমিটি করা হয়। আবার আবেদন পাঠানো হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিত্যক্ত ভবনের বর্তমান দাম জানতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা আবার পুনরায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দেই। এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর পরিত্যক্ত ভবনের প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করে আমাদের চিঠির জবাব দেয়নি। এ কারণে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছি না। একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।’
উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘ছাত্রাবাসে আমাদের কেউ থাকে না। তবে রাস্তা-ঘেঁষা ভবনটি খুবই বিপজ্জনক। তবে অচিরেই ২০০ আসনবিশিষ্ট ছাত্রাবাস তৈরির দরপত্র আহ্বান করা হবে।’