যবিপ্রবি ‘অপরাজনীতির কবলে’ : উপাচার্য
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার প্রতিষ্ঠানটির সংকটময় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যবিপ্রবি অতীতে কখনো এমন অবস্থায় পড়েনি। সব পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
খাতাকলমে ‘রাজনীতিমুক্ত’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অপরাজনীতির কবল’ থেকে রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েও যে ব্যর্থ হচ্ছেন, তা উল্লেখ করে উপাচার্য ‘অসহায়ভাবে’ বলেন, ‘বারবার একই ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে নিয়ে আসার পরও নির্ধারিত সময়ে তা খুলবে কি না এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, নতুনভাবে নির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর ১২ মে ক্যাম্পাস খুলবে কি না তা রিজেন্ট বোর্ডের ওপর নির্ভর করছে।
আজ সোমবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপাচার্য আবদুস সাত্তার। এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথাকাটাকাটি ও মারামারি হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা প্রহরী বদিউজ্জামান বাদল। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তদন্ত কমিটি পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট কমিটি পাঁচ শিক্ষার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পাঁচজনের বহিষ্কারের সুপারিশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
এর জেরে একটানা ১৭ দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকে। আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ২৬ এপ্রিল পুলিশ ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ২৭ শিক্ষার্থীকে আটক ও লাঠিপেটা করে অন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা ডেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে এনে ওই দিনই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ২৬ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই ছুটি ২৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
সেই থেকে ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটির’ মোড়কে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এই ছুটি শেষে আগামী ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নির্ধারিত দিন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার সমাধানের জন্য আলোচনায় বসতে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি, এমনকি তাদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে লিখিতভাবেও কিছু জানায়নি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণ করে রিজেন্ট বোর্ড পাঁচ শিক্ষার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়। সেই সুযোগটিও তারা গ্রহণ না করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। বহিষ্কারের ব্যাপারে যা কিছু হয়েছে, তার সবই করেছে রিজেন্ট বোর্ড। রিজেন্ট বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত একা উপাচার্যের পক্ষে পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়।’
সংকট নিরসন না হলে বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে উল্লেখ করে উপাচার্য আরো বলেন, ‘রিজেন্ট বোর্ড তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আইডি খুলে বঙ্গবন্ধু ও শিক্ষকদের নামে কটূক্তি করেছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলাও করেছে বলে উপাচার্য জানান।