ভিসির পদত্যাগ চাইল বুয়েট অ্যালামনাই

আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বুয়েট অ্যালামনাই। মানববন্ধন থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার হল রুমের সামনে মানববন্ধন করে বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী সাত দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। এতে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি করা হয়।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। শুধু বুয়েট নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’
অবিলম্বে উপাচার্য অপসারণসহ বুয়েট প্রশাসনের আমুল পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরী আরো বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান অতীতের মতো সমুন্নত রাখতে সুযোগ্য, নির্ভিক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে পদায়ন করতে হবে।’
শেরেবাংলা হলের অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘আমার সন্তান মারা গেলে আমি জানাজায় যাব না? আবরার ভিসির সন্তান না? এই কেমন আচরণ? তাঁর নিজের কি একবারও খারাপ লাগেনি? আবরারের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে এটা মানুষ করতে পারে না। এরা আসলেই দানবে পরিণত হয়েছে। এখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
বুয়েটের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘হল প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। ছাত্ররা এখন হল চালায়। আবরার হত্যার দ্রুত বিচার চাই। সুনাম যেটুকু গেছে তা ফেরত আনতে হবে।’
বুয়েটের সাবেক ভিপি মনির আহমেদ বলেন, এই ভিসির কোনো অধিকার নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার। তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করলে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
তেল-গ্যাম খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আবরারের সঙ্গে যেটা ঘটেছে সেটা একটি অপসংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এই অবক্ষয় চলতে পারে না। এই হানাহানি, লুটপাট এবং বিদ্বেষ এসব অপসংস্কৃতির কারণে হচ্ছে। এসব একদিন ঘটেনি। এসব দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই ব্যবস্থা হটাতে গেলে আমাদের প্রত্যেককে রুখে দাঁড়াতে হবে। কথা বলতে হবে।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমার নিজের ছেলের নামও আবরার। আমি দায় নিয়ে বলছি, এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা খুব দরকার। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে আমাদের। এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। তাহলে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধাবীরা দানবে পরিণত হচ্ছে? আমাদের সে স্থানে আঘাত করতে হবে। ভিসিসহ যারা আবরারের জানাজায় আসেনি তাদের অপসারণ চাই আমরা। এদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কোনো অধিকার নেই। ওই ছেলেটি ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিল। আর তাকেই নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এভাবে একটি দেশ এবং একটি জাতি চলতে পারে না।
নব্বইয়ে দশকের ছাত্রনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের সহসভাপতি (ভিপি) শাহিদা সুলতানা এ্যানি বলেন, আবরার যেমন আমার সন্তান খুনিরাও আমার সন্তান। তাহলে আমার এই খুনি সন্তানরা কীভাবে গড়ে উঠছে সেদিকে নজর দিতে হবে। এরা কীভাবে ঠাণ্ডা মাথার খুনি হয়? সেদিকে মনোনিবেশ করুন। আমার মনে হচ্ছে, বুয়েট এখন অভিভাবকহীন।
বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে বিচার করা, খুনিদের আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, বুয়েটকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও প্রভাবমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া, র্যাগিং বা অন্যান্য অজুহাতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধ করা, অবরার হত্যার আগে সংগঠিত অন্যান্য ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাবলির অসম্পূর্ণ বিচারকাজ সম্পন্ন করা ইত্যাদি।