জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত এক ছাত্রী। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. সানওয়ার সিরাজ। হয়রানির বিচার চেয়ে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন একই বিভাগে অধ্যয়নরত ভুক্তভোগী ছাত্রী। কিন্তু পরবর্তী সময়ে লিখিত অভিযোগ ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় সভাপতি বরাবর দায়ের করা অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ‘ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় বর্ষে সানোয়ার সিরাজের কোর্সে কম মার্কস পাই। ফলশ্রুতিতে আমি ওই কোর্সে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে চাই। আর এজন্যই আমি সানোয়ার সিরাজের শরণাপন্ন হই। এ সময় তিনি আমার মোবাইল নম্বর নেন এবং সেভ করে রাখেন। তিনি আমাকে বলে রাখেন, ঐ কোর্সের পরিক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় যেন আমি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
‘আমি যোগাযোগ না করলেও পরীক্ষার দিন (গত বছরের ১২ মার্চ) তিনি ফোন করেন। পরীক্ষা কেমন হলো জানতে চান। এরপর ওই রাতেই তিনি আবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন এবং আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হঠাৎ করে তাঁর এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তাঁর কাছে জানার চেষ্টা করি যে, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা। কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন যে আইডি হ্যাক নয় বরং তিনিই এই মেসেজ প্রদান করেছেন। এ সময় তিনি আরো বলেন যে, আমার প্রতি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চান, ঘুরতে চান। আমি ধারাবাহিকভাবে সানোয়ার সিরাজের এমন আচরণে খুব বিব্রত ছিলাম ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করছিলাম। কিন্তু তিনি রেগুলার আমাকে উত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন। আমি এ ঘটনার জন্য সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু আসন্ন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কারণে এই মুহূর্তে অভিযোগ না দেওয়ার জন্য অনেকে আমাকে পরামর্শ দেয়। এ অবস্থায় আমি সানোয়ারের আচরণে হতাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তী সময়ে তিনি আমাকে আবার কল করে ড্রেস গিফট করা, ঢাকা এবং সাভারের রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং স্ত্রীর অনুপস্থিতে তার বাসায় রাত যাপন করার প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি আরো কিছু অশালীন কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। আমি তাঁর ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একাধিক চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নিতে বাধ্য হই।’
পরবর্তীতে সানোয়ার সিরাজের যৌন নিপীড়নমূলক কথাবার্তা, ফোন কল রেকর্ড ও মেসেঞ্জারের চ্যাটের প্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতি খন্দকার শামসুন্নাহারের কাছে হস্তান্তর করি।’
এদিকে গত এক বছর ধরে অভিযোগ করে কোনো বিচার না পাওয়ায় এবং শিক্ষক সানোয়ার সিরাজের অব্যাহত হয়রানির ফলে মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী ছাত্রী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ২৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার সামসুন্নাহার বলেন, ‘আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে যা বলছে তা বানিয়ে বলছে। এসব মিথ্যা, বানোয়াট।’
বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসরীন সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘আমি ১৯ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট সেল’ নামে আলাদা একটা সেল আছে। তাই আমি ২৪ তারিখ অভিযোগটি ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে বিভাগের কিছুই করার নেই। যা করার ওই সেল বিবেচনা করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের পরিচালক অধ্যাপক রাশেদা আখতার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি ফাইল করেছি। অভিযোগপত্রে সেলের প্রধানের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগপত্রটি সিলগালা করা অবস্থায় বিভাগ থেকে আমাদের সেলে পাঠানো হয়। এখনো আমি দেখিনি। না দেখে আমি কিছু বলেতে পারবো না। রোববার দেখার পর বলতে পারব।’
অভিযুক্ত সানোয়ার সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিভাগের তার নির্ধারিত কক্ষটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে এর আগেও তাঁর স্ত্রী একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্কের অভিযোগ এনেছিলেন।