ঢাবিতে আজও তালা, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস করতে গিয়ে ফিরে গেছেন বলে জানা যায়।
এরপর সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি টিএসসি থেকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কলাভবন, অপরাজেয় বাংলা, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘প্রশাসন করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন, ধিক্কার, ধিক্কার’, ‘ঢাবির সম্মান, নষ্ট হতে দেবো না’, ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘রক্তে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে আন্দোলনের মুখপাত্র মো. শাকিল মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলন চলমান ছিল। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ আন্দোলনকে সফল করেছে। আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষাণ করায় ডাকসুর নেতৃবৃন্দকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “ঢাবি প্রশাসন বারবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ও ঘৃণ্য আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী, ‘The University Shall Have The Powers To Affiliate And Disaffiliate Colleges’ (কোনো কলেজের অধিভুক্তি করা বা বাতিলের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে) থাকা সত্ত্বেও মাননীয় উপ-উপাচার্য মহোদয় বলেছেন, ‘অধিভুক্তি বাতিল আমাদের এখতিয়ারে নেই,’ এটি উক্ত অধ্যাদেশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এমতাবস্থায় প্রশাসন সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে লিখিত প্রজ্ঞাপন জারির আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রেখে অসহযোগ কর্মসূচি চলমান রাখতে প্রস্তুত।”
শিক্ষার্থীদের চলমান এ আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রক্টর, অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সব সময় আছে। তবে যারা নিজের মতপ্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ কেউ এটা আশা করে না। আমাদের আলোচনার দরজা সব সময় খোলা, আমরা শুনতে চাই কার কী বক্তব্য আছে? আমরা একসঙ্গে বসে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অগ্রসর হতে চাই। এভাবে এক শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন করা উচিত নয়। তা ছাড়া তাদের সেশন জটিলতার মধ্যে ফেলে দিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা হতে না দেওয়াটাও অন্যায়।’
গত ১৮ জুলাই থেকে ঢাকার সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা এবং ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা অন্তর্ভুক্ত। পরে কেবল ওই সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।