পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ডুয়েটে তাণ্ডব
গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) সেমিস্টার পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়, গাড়িসহ ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। ছাত্ররা এ সময় সড়কও অবরোধ করে। ছাত্রদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে ও হামলায় অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষকদের মারধরে সাত ছাত্র আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
ডুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন বর্ষের সেমিস্টার পরীক্ষা ২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা। এসব পরীক্ষার ফলাফল আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্যের কাছে এসব পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে তাঁদের ফিরিয়ে দিলে তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আবাসিক সংকুলান না হওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হট্টগোল সৃষ্টি হলে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফটকে অবস্থান নিয়ে তাঁদের বাধা দেন এবং পরিচয়পত্র দেখে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা বহিরাগতদের নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানালে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগবিতণ্ডা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের একপর্যায়ে রাত ১১টার দিকে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করতে উত্তেজিত তিন শিক্ষার্থীকে ডুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কক্ষে নিয়ে আসা হয়।
ডুয়েটের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার পর হল ছেড়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি
এদিকে ওই তিন শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা ফটকে অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান, নিয়াজ মোরশেদ ও মাজহারুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের হামলার মুখে শিক্ষকরা একপর্যায়ে ফটক ছেড়ে প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নির্বিচারে ভাঙচুর করেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষ ও গাড়িসহ সাতটি গাড়ি, চারটি মোটরসাইকেল, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ভবন ও কক্ষের দরজা-জানালার কাঁচ এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ছাত্রনেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন।
এ ব্যাপারে ডুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের কাছে পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানালে তাঁদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রদের মেসে হানা দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। এতে সাত শিক্ষার্থী আহত হন। এ ছাড়া শিক্ষকরা রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেন। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট এলাকা থেকে তিন শিক্ষার্থীকে ধরে ডুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে শিক্ষকরা ওই শিক্ষার্থকে মারধর করেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এ সময় কোনো শিক্ষকের ওপর হামলা করেননি। তবে ঘটনার সময় হুড়াহুড়িতে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ডুয়েটের সিএসই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের বাদশাহ ও মামুন, একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের রুহুল আমিন, ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের জহিরুল, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের রাজু, আর্কিটেকচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের রাশেদ এবং আইপিই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের মিজান।
ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন জানান, বিশ্ববিদালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার একাডেমিক কাউন্সিলের ৫৭তম (জরুরি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাত্রদের বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় এবং ছাত্রীদের বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।