২৪ ফেব্রুয়ারি খুলছে আইআইইউসি, ১০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি খুলছে। সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনায় দোষী দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আট শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত র্যাগিং, শিক্ষক লাঞ্ছনা, ছাত্র নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমসহ কিছু শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ গতকাল অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পেশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
সিন্ডিকেট তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বিশদ পর্যালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে দোষী সাব্যস্ত ১০ ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি প্রদান করে। সভায় উচো অং মারমা (আইডি নম্বর এলএম ১৮৩১২২) ও মো. অনিক ইসলামকে (আইডি নম্বর ইটি ১৮৩০৮০) স্থায়ী বহিষ্কার, মো. মশিউর রহমান (আইডি নম্বর ইটি ১৮৩০৫৭) ও ওমর ফারুক তুহিনকে (আইডি নং ইটি১৮৩০৭২) দুই বছরের জন্য, হাসান হাবীব মুরাদ (আইডি নম্বর এলএম ১৮৩১২৩), রবিউল হোসেন রনি (আইডি নম্বর ইবি ১৪১০০৮) ও মো. শফিউল আলমকে (এমবিএ আর ১৯৩১৪৭) এক বছরের জন্য এবং এফজাজুল হক অমি (আইডি নম্বর সি১৬৩০২৪), আবদুল্লাহ আল তাশরীফ (আইডি নম্বর ইটি ১৬৩০৩৩) ও আবদুল্লাহ আল নাঈমকে (আইডি নম্বর ইটি১৬৩০২৮) এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ ছাড়া আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র বহন ও প্রদর্শনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
এর আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই দিন রাত ৯টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ায় বিপাকে পড়ে হলে থাকা চার শতাধিক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ওসমান (রা.) হলের মো. আদনান নামের শরিয়াহ অনুষদের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে ২৭ জানুয়ারি রাতে মারধর করেন ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন ছাত্র। পরে শিক্ষকরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এর কিছুদিন আগে ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। এসব ঘটনার জেরে ২৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর পৌনে ১টার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষকদের স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য জড়ো হন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে টর্চার সেল বানিয়ে ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করছে। এ সময় তাঁদের ওপর ছাত্রলীগের কয়েকজন হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষ তা জানে। প্রশাসন অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে। এর মাশুল ২৫ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের পোহাতে হচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, মহানগর, উপজেলা ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যেহেতু আইআইইউসি রাজনীতিমুক্ত তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই এবং এখানে কাউকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করার অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ কাওসার আহমেদের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলেননি।