‘এলমার মতো কাউকে যেন জীবন দিতে না হয়’, কেঁদে কেঁদে বললেন বাবা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী মেঘলা (২৪) হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সহপাঠী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
আজ রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা এলমার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এলমার মা শিল্পী চৌধুরী বলেন, ‘আমার অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে (এলামা) নিয়ে, সেটা ভেঙে গেল। আমি মাঝে মাঝে তাঁকে বিয়ের কথা বলতাম। সে বিয়ে করতে চাইত না। তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। সে পড়াশোনা করবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অনেক বড় হবে। কিন্তু আমার মেয়েকে সে (এলমার স্বামী) নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি মিথ্যা কথা বলে তাঁকে বিয়ে করে। এই খুনের পিছনে এলমার স্বামীর পরিবারের সবাই জড়িত। কিন্তু কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করছি তার পরিবারের সবাইকে ধরেন; তাহলে সব তথ্য পাবেন।’
এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রাণের মেয়ে, যাকে আমি কত আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষিত করেছি, আজকে আমার সেই মেয়েকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মিলে তিন দিন ধরে অত্যাচার করে তাঁকে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই অসহায় বাবার কথাটা শুনেন। আপনি এর বিচার করেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ থাকবে না।’ এ সময় তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘আর যেন এলমার মতো কাউকে জীবন দিতে না হয়।’
এলমার বান্ধবী তিথি বলেন, ‘এলমাকে ক্লাসে আসতে দিত না। তাঁকে সার্বক্ষনিক পাহারা দিয়ে রাখতো। তাঁকে মানসিকভাবে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সে একটা সময় বাসা থেকে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু তাঁকে বের হতে দেওয়া হয়নি।’
এলমার জুনিয়র অর্থী বলেন, ‘আপু, আগে থেকে যে কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল বিয়ের পর তিনি সেগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান; এটা আমাদেরকে বিচলিত করে। আমরা ধারণা করছিলাম, আপু একটা সমস্যার মধ্যে ছিল। আপুকে ফোর্স করা হয়েছে এসব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার। সুতরাং এটাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলেও এটা কোনোভাবেই মানতে পদরছি না যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এলমা চৌধুরীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যা দাবি করে বিচার দাবি করেছেন তাঁর সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
গত ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান এলমা। তাঁর শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। পরিবার ও সহপাঠীরা এটিকে হত্যা দাবি করলেও এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর বাদী হয়ে করা মামলায় এলমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়। এরপর এলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীনের (৩৬) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।