প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার : শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, অতীতে অনেক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, এবার অন্তত আমরা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা দেখতে চাই না এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। শিক্ষার ক্রান্তিকাল চলছে, অস্থিরতা আছে। আর যাই হোক এর মধ্যে আমরা পরীক্ষাটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে নিতে চাই।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রশ্নপত্রগুলো দ্রুত সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানো ছাড়াও যথাযথভাবে কঠোর নজরদারি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর নির্দেশনা দেয় হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কারো বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ পেলে বা কোনো কেন্দ্রে নকল সরবরাহের কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় নকল প্রতিরোধে শিক্ষকদের পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে বলেও উল্লেখ্য করেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমি অত্যন্ত কম সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের শিক্ষার মান যেভাবে যথাযথভাবে বাড়ানো যায় এবং একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সরকারের যেন কোন ঘাটতি না থাকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এবারও পরীক্ষা সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নকলমুক্ত রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের গুজব প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গুজব থেকে পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে দেশের সব কোচিং সেন্টার আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলার থানার লকারে প্রশ্নপত্রের ট্যাংক যথাযথ নিরাপত্তার সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে ওই দিনের প্রেরিত সেট কোড সম্বলিত এসএমএস সেদিনই মোবাইল থেকে মুছে ফেলতে হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মোবাইল ফোনের সুবিধা সহ ঘড়ি কলম এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুমতি বিহীন যেকোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। এই আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, পাবলিক পরীক্ষা সম্পূর্ণ নকলমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যতীত অন্য যেকোনো লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনের সময় দায়িত্ব প্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের নিকট নকল সরবরাহের জড়িত ব্যক্তি ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তাৎক্ষণিকভাবে সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আগামীকাল ২৬ জুন থেকে সারাদেশে একযোগে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি), আলিম, ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ডিপ্লোমা ইন কমার্স, এইচএসসি (ভোকেশনাল) এবং এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি নিজেও বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন বলে জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা এবারের এইচএসসি পরীক্ষা নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা, যা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এবার সারা দেশে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি, আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি।
দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।