পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি, সিলগালা

পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পরে সাংবাদিকদের বিবদমান দুই পক্ষকেই বের করে দিয়ে প্রেসক্লাব সিলগালা করে দিয়েছে তারা।
গতকাল বুধবার (২৮ মে) রাতে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের সহযোগিতায় একদল যুবক প্রেসক্লাবে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা আজ বৃহস্পতিবার তালা ভেঙে প্রেসক্লাবে প্রেবশ করে অবস্থান নেন। তখন সাংবাদিকদের অপর একটি অংশ জোরপূর্বক প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
এরপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের দুই পক্ষকেই বের করে দিয়ে প্রেসক্লাব সিলগালা করে দেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতার মদদে একদল দুর্বৃত্ত প্রেসক্লাবে অবস্থানকারী সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। রাতেই বিক্ষুব্ধ পেশাদার সাংবাদিকরা তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ক্লাবের সামনে পঞ্চগড়-টুনিরহাট সড়কে অবস্থান নেন। পরে সদর থানা পুলিশ এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ মজিদ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর জনভোগান্তির কথা বিবেচনায় অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। তখন আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে প্রেসক্লাব খুলে দিয়ে সাংবাদিকদের হাতে চাবি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। তা না হলে নিজেরাই প্রেসক্লাবের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এরপর আলটিমেটাম অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তালা ভেঙে প্রেসক্লাবে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। এরপর অন্য পক্ষও দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় জেলা প্রশাসক প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং দুই পক্ষকেই প্রেসক্লাব থেকে বের করে দিয়ে সিলগালা করে দেন।
এ সময় পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লা হিল জামানসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের পর ১৭ বছর ধরে সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে অবস্থান নিলে আগের নেতারা পালিয়ে যান। এ সময় একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে সংঘাত এড়াতে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে প্রেসক্লাব পরিচালিত হয়ে আসছিল।
এদিকে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে তালা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আহমেদ আবু জাফর। রাতেই তিনি পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে তালা লাগিয়েছেন কারা জানতে চেয়ে তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। তালা দেওয়ার পরই ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বেশ কিছু সাংবাদিক।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সরকার হায়দার বলেন, প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা সংবাদকর্মীদের কণ্ঠ রোধেরধর শামিল। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই প্রেসক্লাবকে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি সাংবাদিক সিন্ডিকেট কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে সদস্যপদ বঞ্চিত সংবাদকর্মীরা প্রেসক্লাব সংস্কার করে সুগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু এবারও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে একই ভাবে সেই সংস্কার প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেওয়া হলো। এটা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে প্রেসক্লাবের অপর পক্ষের নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রেসক্লাব সুন্দর নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই চলছিল এবং নতুন সদস্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ২১ আগস্ট হঠাৎ করেই প্রেসক্লাবের সদস্য নন এমন বহিরাগত একদল সাংবাদিক প্রেসক্লাব দখল করেন। দখলের পর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। দখলকারীরা কারো কথা মানছিল না। আমরা মূলধারার সাংবাদিকরা সদস্য হয়েও প্রেসক্লাবে যেতে পারছিলাম না। অথচ দখলকারীরা নিজেদের বিভিন্ন পদ-পদবীর পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এজন্য উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমরা সবসময়ই সমাধানের পক্ষে ছিলাম এবং আছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষকে ডেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।