গানে স্লোগানে উত্তাল নগর ভবন, সব সেবা বন্ধ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। আজ সোমবার (১৯ মে) তারা নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন। এই সময় ভবনের মূল ফটক আটকে রাখেন তারা। যার কারণে ডিএসসিসির সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর গুলিস্তানে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা ও দলীয় নেতাকর্মী। সকাল থেকেই দক্ষিণ সিটি করপোরেনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগর ভবনের সামনে ঢাকাবাসীর ব্যানারে এসে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শত শত জনতা জড়ো হয়ে যায়। তাদের ব্লকেডের কারণে নগর ভবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে এবং সব সেবা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ব্লকেড কর্মসূচির কারণে গুলিস্তানের আশপাশ এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।
এইদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান জানিয়েছেন, গত দুই দিনের মতো আজও সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ। অফিসে তালা দেওয়া থাকলে তো আমরা সেবা দিতে পারবো না। তাই যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন সংগীত পরিচালক ইথুন বাবু, সংগীতশিল্পী মৌসুমি, সংগীতশিল্পী পলাশসহ সংগীতাঙ্গনের একঝাঁক মানুষ। এসময় আন্দোলনকারীদের সাথে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গানে গানে স্লোগানও ধরেন তারা। একই সাথে আন্দোলনকারীরাও শিল্পীদের প্রতিবাদী গানের তালে তালে কর্মসুচি পালন করেন তারা।
আদালতের রায় মেনে এবং নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট বাস্তবায়নে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
আন্দোলনকারীরা জানান, পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকেই নগর ভবন এলাকায় জড়ো হতে থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নগরবাসী। বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচির আগে থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে বঙ্গ মার্কেট এলাকা ব্লকেড করে দেয় আন্দোলনকারীরা। একই সাথে গোলাপ শাহ মাজারের রাস্তাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কার্যত সকাল থেকেই অচলবস্থা বিরাজকরছে নগর ভবন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারসহ আশপাশের এলাকা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, আমাদের ভোটের রায় হাসিনা ছিনিয়ে নিয়েছিল, আদালতের রায়ে আমাদের ভোটের মর্যাদা ফিরে পেয়েছি। ইশরাক হোসেনকে আদালত মেয়র ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনও গেজেট দিয়েছে। এই সরকারের লোকজন তাকে দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, ইশরাক ভাইকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এই জায়গা ছাড়ব না। এখন আমাদের দাবি শুধু ইশরাক ভাইয়ের মেয়রের দাবিই নয়, আসিফেরও পদত্যাগ করতে হবে। ওরা নব্য স্বৈরাচার।
সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে স্টেজ করে অবস্থান করে নগর ভবন এলাকা ব্লকেড কর্মসুচি পালন করছেন তারা। ‘আসিফ তুই স্বৈরাচার, এই মুহূর্তে গদি ছাড়’, ‘শপথ নিয়ে তালবাহানা, ‘চলবে না চলবে না’, ‘অবৈধ তালবাহানা মানি না মানবো না’ সহ নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয় নগর ভবন এলাকা। হাজার হাজার নগরবাসী একসাথে ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে আওয়াজ তুলেন। গত শনি ও রোববার সচিবালয় অভিমুখে হাজার হাজার নগরবাসীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন আন্দোলনকারীরা।

আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করছেন বলেও অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। তবে ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নগর ভবনে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের চেয়ারে দেখতে চান তারা।