সীমানা পুনর্নির্ধারণে ৪০৬ আবেদন যাচাই-বাছাই করছে ইসি

জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তারপর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা পুনর্নির্ধারণে ৬৩টি সংসদীয় আসনের জন্য ৪০৬টি আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। এ আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে কাজ করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
আজ রোববার (১৮ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘সীমানা পুনর্নির্ধারণে ৬২ অথবা ৬৩টি সংসদীয় আসনের জন্য মোট ৪০৬টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেখানে সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদনগুলো কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। সীমানা নির্ধারণে কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, তাও আলোচনা হয়।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসিতে রেকর্ডসংখ্যক ৪০৬টি আবেদন জমা পড়েছে। ভৌগলিক অবস্থান, আয়তন ও জনশুমারিকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করতে চায় ইসি। এসব আবেদনের বেশির ভাগেই ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব এসেছে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘যারা আবেদন করেছেন, তাদের যুক্তি রয়েছে। কিন্তু, সব যুক্তি গ্রহণযোগ্য না। যেগুলো গ্রহণযোগ্য, সেগুলো আমরা গ্রহণ করব। সেজন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
গত ৬ মে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তারপর থেকে মূলত এ কাজে গতি বেড়েছে। ইসি সচিব জানান, সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ অনেক আগে থেকে শুরু করে ইসি। কিন্তু, আইন সংশোধনের জটিলতায় আটকে ছিল কাজ। আইন সংশোধনের অনুমোদনের পর থেকে ইসি আরও গতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আগে বলেছিলেন, সীমানা নির্ধারণের আইনটি সংশোধনের অনুমোদন পাওয়ার পর তিন মাস লাগবে কাজ শেষ করতে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরগুনা, সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর এলাকা থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। তবে, সব এলাকা থেকে মোটামুটি আবেদন পড়েছে। মূলত, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেসব এলাকা থেকে আবেদন এসেছে।
সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ পর্যালোচনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লা বলেছিলেন, আগের যেটি ছিল, এর দুটো বিষয় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মূলত জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে এ সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি করা হয়েছিল। আমরা করতে চাইছি ভৌগলিক আয়তন, অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক হারে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে। এই সময়ে প্রায় ১৩০টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদাহরণ। এই পরিবর্তনগুলো মূলত সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য এবং প্রশাসনিক ইউনিটের অখণ্ডতা বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৫০টি আসনের সীমানায় ছোটখাটো পরিবর্তন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫টির সীমানা পরিবর্তন করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০২৩ সালের ১ জুন ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টির সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল। এই পরিবর্তনগুলো মূলত সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য এবং প্রশাসনিক ইউনিটের অখণ্ডতা বিবেচনায় রেখে করা হয়েছিল।