টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ে সাইকেল পেল ৩ শিশু
গাজীপুরের কালীগঞ্জে টানা ৪০ দিন মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করায় ৩ শিশুকে বাইসাইকেল উপহার দিয়েছে ‘আল-আমিন সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ’। গতকাল রোববার (৪ মে) বিকেলে কালীগঞ্জ আরআরএন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিশুদের হাতে সাইকেল তুলে দেওয়া হয়।
সাইকেল পেয়ে খুবই আনন্দিত তানজীবুল করীম সাদ, আদিল ইসলাম ও মো. জুনায়েদ সিদ্দিকী। তারা জানায়, ‘আমরা সাইকেল পেয়ে খুব খুশি। এখন থেকে আমরা আর কখনও নামাজ বাদ দেব না।
সংগঠনের উদ্যোগে ঘোষণা দেওয়া হয়, যারা টানা ৪০ দিন জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, তাদের সাইকেল উপহার দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২৩ জন শিশু, যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল হক, মুফতি শরীফুল ইসলাম, মো. নায়েবুর রহমান (ভিপি মাসুদ) প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আইনুল ইসলাম রিয়েল বলেন, আমার প্রতিবন্ধী সন্তান আল-আমিনকে কেন্দ্র করে আমি এই সংগঠনটি গড়ে তুলি। আল-আমিনসহ সকল প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
এ সময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। এ ধরনের উদ্যোগ পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, মসজিদে মসজিদে নেওয়া প্রয়োজন। ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো নামাজ, এটি ভালোভাবে শেখা ও চর্চা করা জরুরি। যারা ভালো জানে, তাদের কাছ থেকেই শেখা উচিত। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের মাঝে নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলার এই প্রয়াস ‘আল-আমিন সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশন’র একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
তনিমা আফ্রাদ আরও বলেন, আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও এ ধরনের আরও চমৎকার উদ্যোগ আমাদের সামনে আসবে। বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উদ্যোগ। আমরা যদি ইসলামের পথে জীবন পরিচালিত করি, তবে তা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে। এই মহত্ আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতায় এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন। ‘আল-আমিন সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তানকে কেন্দ্র করে যে মহত্ উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের সামনে তুলে আনা, যাতে সমাজ তাদের ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। এ শিশু যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, এজন্য আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারি এই চেতনায় ফাউন্ডেশন কাজ করছে। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের পাশে থাকবো এবং এই শিশুদের এগিয়ে নিতে আন্তরিক সহযোগিতা করবো।
অনুষ্ঠানে ‘আল–আমিন সমাজ কল্যান ফান্ডেশন, বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, কেউ যদি এক বছর ধরে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে, তবে তাকে ওমরাহ হজে পাঠানো হবে। অনুষ্ঠানে আরও ২০ জন অংশগ্রহণকারী শিশুকে ক্রেস্ট, সনদ ও শিক্ষা বৃত্তিসহ উপহার দেওয়া হয়।
বর্তমানে সংগঠনটি গাজীপুর, ঢাকার ধামরাই, পাবনা ও ভোলা জেলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে দেশব্যাপী বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।