এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া, অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত বিএনপি
কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আগামী সোমবার (৫ মে) দেশে ফিরবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁর বাসভবনে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
আজ শনিবার (৩ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে চার মাস যুক্তরাজ্যে প্রথমে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানাকার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, এরপর তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক পরিবেশে চিকিৎসা শেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ বোধ করছেন। এ কারণেই তিনি দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই এশিয়া মহাদেশের নারী নেত্রীদের মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য যে দুই একজন সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সবেচে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন, কারা-নির্যাতিত হয়েছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কখনোই অন্যায়ের কাছে, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত করেননি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়া যখন তাঁর স্বামী স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন তাদের দুই শিশুপুত্রের হাত ধরে তিনি (খালেদা জিয়া) ঢাকায় চলে এসেছিলেন। এরপর তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, দীর্ঘ ৯ মাসই ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বন্দি ছিলেন। এই মহীয়সী, অকুতোভয় নেত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। তিনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনোদিন আপস করেননি। সেই নেত্রীকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়ে নির্যাতন করে, তাঁকে অসুস্থ করে ফেলা হয়। এরপর তাঁকে দেশে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চিকিৎসকরা এসেছিলেন। পরবর্তীকালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে নিয়ে তাঁর উন্নত চিকিৎসা করা হয়। তিনি সেখান থেকে ফিরে আসছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু আমাদের প্রিয় নেত্রী নন, তিনি আমাদের বড় সম্পদ। তিনি আমাদের সেই আলোকবর্তিকা যাকে সামনে রেখে আমরা লড়াই-সংগ্রাম করি সবসময়। সেই নেত্রী ফিরে আসবেন, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে আবেগ আছে, দেশের প্রতিটি মানুষ উৎসাহিত, উজ্জীবিত। তিনি আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন, তাঁকে যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ঢাকা সিটি দক্ষিণ ও উত্তর এবং আমাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে যৌথসভা করেছি, শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে জনগণ যেন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি। আমরা আশা করছি, আগামী ৫ মে বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে, সম্ভবত সেটা কাতারের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তিনি আমাদের দেশে ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এটি বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে নির্ভর করবে। এটি পরে নিশ্চিত হতে পারলে আমরা গণমাধ্যমে জানিয়ে দেবো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন থাকবে, তারা যেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাসহ রাস্তার দুই ধারে যানজট সৃষ্টি না করে এই মহান নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এক হাতে জাতীয় পতাকা, অপর হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আমরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাব।’