নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান, প্রয়োজনে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নারী সংস্কার কমিশন জাতির চিন্তা-চেতনা, তাহজিব-তমুদ্দুন এবং আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। আর কমিশন প্রত্যাখ্যান না করলে তাদের প্রতিবেদনও শেষ হয়ে যায়।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনবিষয়ক জাতীয় সেমিনারে এ হুঁশিয়ারি দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির।
সেমিনারে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ দেশের প্রায় সব ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
জামায়াতের আমির বলেন, তারা সমাজের বিপর্যয়ের জন্য এ প্রস্তাবনা এনেছে। আমরা এ কমিশনই মানি না। নারীদের অধিকার কোথাও ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকলে, সেটাকে যদি আবার সামনে আনতে হয় তাহলে অবশ্যই এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের ঈমান-আকিদা-তাহজিব-তমুদ্দুনের ওপর যারা বিশ্বাস রাখেন তাদের বাদ দিয়ে নয়, তাদের প্রাধান্য দিয়েই কমিশন করুক। দুঃখজনকভাবে এই কমিশনে সেই রকম একজন নারীকেও রাখা হয়নি। এখানেই তো এটা পক্ষপাতদুষ্ট। আমাদের সাফ কথা—এটা আমরা মনব না। এর জন্য কোনো আন্দোলনে যেতে চাই না, তবে বাধ্য করা হলে অবশ্যই আন্দোলন করব।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, নারী সংস্কার কমিশন কোরআনবিরোধী এই প্রতিবেদন দেওয়ার দুঃসাহস কীভাবে দেখায়? নিশ্চয়ই এর পেছনে কেউ উসকানি দিচ্ছে। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে মানুষ যা আশা করেছিল, তার উল্টোটা পেয়েছে। এখন দ্বীনদার মানুষ জেগে উঠেছে, তারা একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এই দিক থেকে জনদৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই কমিশনের এই প্রতিবেদন। এটা টিকবে না, ভেসে যাবে। তারা একদিকে সমানাধিকার অন্যদিকে কোটার কথা বলে স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
এই সেমিনারের প্রতি জামায়াতের পক্ষ থেকে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা হাতে হাত ধরে দ্বীন এবং সমাজের সব কল্যাণের কাজ একসঙ্গে করব। আমরা এই বার্তা দেব যে, আমাদের ভাগ ভাগ টুকরা টুকরা করে তোমরা আমাদের মাথায় আর কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবা না। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ হবে ইনসাফের বাংলাদেশ, কোরআনের বাংলাদেশ। যার উত্থান ঠেকানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সেমিনারে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আজকের সেমিনারের মেসেজ হলো-যারা দেশকে অশান্ত করতে চায়, যারা দেশকে নাস্তিক বানাতে চায়—তাদের সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।
নারী সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, বিগত ৫৩ বছরে নাস্তিকরা হীন চক্রান্ত করেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই হীন চিন্তা বাস্তবায়ন হবে না। যারা ফেরাউনি ভূমিকায় ছিল তারাও টিকতে পারেনি, রান্না করা ভাতও খেয়ে যেতে পারেনি। আপনারাও ৫ মিনিট সময় পাবেন না।
চরমোনাই পীর আরও বলেন, ইসলামি দেশ ও মানবতা গড়ার একটা পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়েছে আজকের এই সেমিনারের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশন এ দেশের ৯০ শতাংশের বেশি নারী সমাজের চিন্তা-চেতনাবিরোধী প্রস্তাবনা দিয়েছে, এই প্রস্তাবনা দেওয়াটা ভয়ঙ্কর। তাদের সারকথা হলো-ধর্ম নারীর প্রতি বৈষম্যের প্রধান কারণ।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, তারা পশ্চিমা বিশ্বের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়ে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা পূর্ব পরিকল্পিত। এর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও জড়িত। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে। নারীদের কাঁধে বন্দুক রেখে ইসলামের ওপর আক্রমণ করার দূরভিসন্ধি বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম আবরারের পরিচালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, এবি পার্টর সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ।