নারী উদ্যোক্তার বায়োগ্যাস প্লান্টে অর্ধেক মূল্যে মিলছে গ্যাস

ফরিদপুরের শহরতলীর কোমরপুরের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন। তিনি তৈরি করেছেন বায়োগ্যাস প্লান্ট। এতে তিনি সফল হয়েছেন। বর্তমান তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হয় ১০০ ঘনফুট গ্যাস। ৬০টি পরিবারকে এই গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। সামনে আরও ৪০টি পরিবারকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসার কাজ শুরু করা হয়েছে। এর আগে, তিনি ইউটিউব দেখে শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদন। সেখানেও তিনি এখন বাংলাদেশের ভিতর একজন নামকরা কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার উৎপাদনকারী নারী উদ্যোক্তা।
জানা যায়, সরকার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা এবং নিজের ৬০ শতাংশ টাকা দিয়ে শুরু করেছেন এই বায়োগ্যাস প্লান্ট। সিলিন্ডার গ্যাসের থেকে কম দামে বায়োগ্যাস পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। এদিকে, তানিয়ার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন অনেক বেকার নারী-পুরুষ। এতে তাদেরও সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক নারী-পুরুষ।
বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী কুলসুম বেগম জানান, প্রতি মাসে আমাদের দুটি করে গ্যাস সিলিন্ডার লাগতো যার মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। এখন সেখানে সারা মাসে মাত্র ১১০০ টাকা দিয়ে আমরা এই সুবিধা পাচ্ছি। আমরা আশা করব, তানিয়া পারভীনের যাত্রা আরও সফল হবে।
আরেক সুবিধাভোগী আকলিমা বেগম জানান, আমাদের ব্যাপক সুবিধা হয়েছে এই বায়োগ্যাস পাওয়াতে। আমরা গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করি। আমাদের পরিবারে অনেক সদস্য হাওয়ায় প্রতিমাসে ২-৩টি সিলিন্ডার লাগতো। অনেক সময় কাঠখড়ি পুড়িয়ে রান্নাবান্নার কাজ সারা হত। এখন পুরো মাসে আমাদের মাত্র ১১০০ টাকায় পুরো পরিবারের জ্বালানি পেয়ে যাচ্ছি। এতে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা কে এম জাফর জানান, তানিয়া পারভীনের মতো একজন নারী উদ্যোক্তা পেয়ে আমরা এলাকাবাসী অনেক গর্বিত। তিনি প্রথমে এলাকায় কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। সেখানেও তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এবার সরকারের সাথে মিলেমিশে শুরু করেছেন বায়োগ্যাস উৎপাদন। যেখানে আমাদের এলাকার প্রায় ১০০টি পরিবার উপকৃত হবে। আর এসব কারণেই তাকে সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছি আমরা। তিনি যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
ওই প্লান্টে কাজ করা কবির হোসেন জানান, আমরা বেকার ছিলাম, এখানে এখন কাজ করে পূর্ণ স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছর এখানে আমরা ৪-৫ জন কাজ করি। আমাদের পুরো পরিবার এখানকার কাজের ওপর নির্ভরশীল। তানিয়া পারভীনের মতো একজন উদ্যোক্তা পেয়ে আমরা অনেক খুশি।

নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীন বলেন, আমি সরকারের সাথে যৌথভাবে এই বায়োগ্যাস প্ল্যান শুরু করেছি। এখন এলাকার পরিবারগুলোর মাঝে বায়োগ্যাস ছড়িয়ে দিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৬০টি পরিবারকে বায়োগ্যাস দেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৪০টি পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস দেওয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে সরকার থেকে ৪০ লাখ টাকা আমাকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬০ ভাগ টাকা আমি নিজ থেকে এখানে বিনিয়োগ করেছি।
ফরিদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, নারী উদ্যোক্তা তানিয়া পারভীনের বায়োগ্যাস প্লান্টে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ ভাগ টাকা এবং তানিয়া পারভীন নিজে ৬০ ভাগ টাকা দিয়ে এই বায়োগ্যাস প্লান্ট শুরু করেছেন। তিনি এখন ৬০টি পরিবারের মাঝে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছেন। সামনে তিনি আরও ৪০টি পরিবারে বায়োগ্যাস দেবেন। ব্যবহার নিরাপদ হওয়ায় বায়োগ্যাস উৎপাদনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।