আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এজন্য ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করে সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।

আজ শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

গতকাল শুক্রবার র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি উগ্রবাদী বই উদ্ধার করা হয়।

আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন (২৫), দুই আঞ্চলিক প্রশিক্ষক জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা (২৪) ও আমিনুল ইসলামকে (২৫) গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরাফাত ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘আনসার আল ইসলামের’ সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তাদের সদস্য সংগ্রহসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। তাই গ্রেপ্তারকৃতরা আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘শাহাদাত’ নামে নতুন গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা শতাধিক। ইসমাইল আনসার আল ইসলামের রিক্রুটিং শাখার প্রধান এবং ‘শাহাদাত’ গ্রুপেরও প্রধান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

ইসমাইলের উদ্ধৃতি দিয়ে আরাফাত জানান, এই গ্রুপটি সালাহউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। এই গ্রুপের অন্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘শাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো এবং সংগঠনের সদস্যদের শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণ দিত। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিশেষত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরাসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়।

তারা তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে নতুন গোপনীয় অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো এবং সংগঠনের সব প্রকার নির্দেশনা এই অ্যাপসের মাধ্যমে প্রদান করতো। আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, এ সংগঠনের অধিকাংশই মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। সাধারণ লেখাপড়ায় শিক্ষিত উগ্র মনোভাবাপন্ন লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশ বিরোধিতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। এ সংগঠনে মাদ্রাসা শিক্ষক সদস্যগণ অত্যন্ত সু-কৌশলে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রদের এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত করতো।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইল নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত। এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে সংগঠনের রিক্রুটিং শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

আরাফাত ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার জিহাদ একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। সেও প্রায় এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে বিদেশে অবস্থানরত একজন জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। এরপর থেকে তার মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল পেশায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক। প্রায় ছয় মাস আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক জঙ্গি নেতার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে সেও সংগঠনে যোগ দেয়। পরে তিনি তার নিজ এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এক পর্যায়ে সে সংগঠনে আঞ্চলিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।

এক প্রশ্নের জবাবে আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘সালাউদ্দিন বর্তমানে বিদেশে আছে। সংগঠনটির ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। আমরা অধিকর তদন্তে প্রত্যেকের অবস্থান শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’