জামিনে থাকা শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার, পটুয়াখালীর ওসিকে হাইকোর্টে ভর্ৎসনা
জামিনে থাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পটুয়াখালীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে রুল জারি করেন আদালত।
আজ সোমবার (২৪ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা কি মালিক হয়ে গেছেন? মিটিংয়ে আছেন (ওসিকে উদ্দেশ্য করে) বলে ফোন কেটে দেন। মিটিং শেষ করে আর ফোন দেননি, কোনো পদক্ষেপ নেননি। দেশের মালিক জনগণ। অথচ, যে যেখানে বসে, সে সেখানকার মালিক বনে যান। আপনারা কি নিজেদেরকে মালিক মনে করেন? জামিনে থাকার পরও আসামিকে গ্রেপ্তার করে আবার কোর্টে পাঠিয়েছেন। এর জন্য কি দেশ স্বাধীন হয়েছে? আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদেরও।’
দুই পুলিশ সদস্য এ নিয়ে তিন দিন হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন। তাদের পক্ষে আজ ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী। পরে, আদালত আগামী ৩০ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন।
আদালতে আশরাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান।
আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, ‘আমি ১৭ মে আসামিকে (আশরাফুল হাওলাদারকে) জামিন করাই। ১৮ মে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন আসামি আমাকে ফোন দিয়ে বলেন–স্যার পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডভোকেট সার্টিফিকেট দেখাইছি। কিন্তু, তারা (পুলিশ) মানতেছে না। তখন আসামির ফোন দিয়েই আমি এএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলি। আইনজীবী পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ করলেও তিনি আসামিকে ছাড়েননি। উল্টো আমাকে বলেছেন, তার কাছে ওসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, নিয়ে যেতেই হবে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে আসামির স্বজনরা আমাকে ফোন দিয়ে ওসির নম্বর দেন। রাত ১০টা এক মিনিটে আমি ওসিকে ফোন দেই। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, তাই ফোন ধরে মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন রেখে দেন। কিন্তু, ওসি আর পরে আমাকে ফোন দেননি। পরদিন অর্থাৎ ১৯ মে আসামিকে কোর্ট চালান করে দেন।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘এই কথাগুলো আমি হলফনামা করে আদালতে জমা দিয়েছি। এই বক্তব্যে শুনে আদালত জানতে চেয়েছিলেন, এ বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য আছে কি না? যদি থাকে তবে তা কোর্টে আগামী ৩০ জুলাইয়ের লিখিত আকারে জমা দিতে বলেছেন। ওইদিন আদালত আদেশ দেবেন।’
দুই পুলিশ সদস্যের আইনজীবী তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চাইলেও আদালত তা দেননি বলে জানান এই আইনজীবী।
আগাম জামিনে থাকা আশফুলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নজরে আনলে গত ২০ মে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমানকে তলব করা হয়।
জামিনে থাকার পরও উদ্দেশমূলক গ্রেপ্তার করে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে রুল জারি করেন আদালত।
লিখিত আদেশে আদালত বলেন, ‘মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সদস্যের আচরণ বা প্রক্রিয়া আইনের পরিপন্থি। একইসঙ্গে তা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থি। এটা মীমাংসিত বিষয় যে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করে নাগরিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’
আদালত বলেন, ‘কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের আগে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনি দিক নিয়ে ভাবতে হয়। এই আসামি ফৌজদারি বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে রয়েছেন। আইনজীবী আসামিকে উচ্চ আদালতের জামিনের প্রত্যয়নও করেছেন। উল্লেখিত মামলায় মনে হচ্ছে এএসআই মিজানুর রহমান সর্বোচ্চ আদালতের নীতিমালা ও আইনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। ফলে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করবেন।’
এ আদেশে গত ১৮ জুন আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান। কিন্তু, আদালত আবেদন গ্রহণ না করে রোববার (২৩ জুলাই) তাদের আসতে বলা হয়। আর আশরাফুল হাওলাদারের আইনজীবীকে বলা হয়, বিটিআরসির কাছ থেকে ফোন কলের রেকর্ড নিয়ে আসতে।
সে ধারাবাহিকতায় রোববার (২৩ জুলাই) শুনানির শুরুতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান।
আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা জানান, বিটিআরসির কাছে কল রেকর্ড চেয়েও তিনি পাননি। তখন আদালত ফোন কল রেকর্ডের বিষয়ে হলফনামা (আবেদন) নিয়ে আসতে বলেন। সে ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৪ জুলাই) ফোন কলের বিষয়ে হলফনামা দাখিল করা হয়।