ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিলে রুল
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার (২৩ জুলাই) বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শ্রম আদালতের পরিদর্শকসহ কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১৯ জুলাই শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা আবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো দেওয়ানি প্রকৃতির। কিন্তু এসব অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে এনে তার বিরুদ্ধে বিচার করা হচ্ছে, যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনার জন্য নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে, রয়েছে নিয়োগ বিধিমালাও। আর বাংলাদেশের যেকোনো কোম্পানির চাইতে গ্রামীণের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাও বেশি।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এই বক্তব্যগুলো বিচারিক আদালতে গিয়ে বলতে সমস্যা কোথায়?’ জবাবে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, ‘কীভাবে বলব? যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে এর সবগুলোই দেওয়ানি প্রকৃতির, কিন্তু ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে বিচার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শ্রম আইনে ৩৩টি অপরাধকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলায় যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে এবং অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেগুলো ওই ৩৩টি ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। যে কারণে আমরা হাইকোর্টে প্রতিকার চাইতে এসেছি।’
শুনানির এক পর্যায়ে ড. ইউনূসের আইনজীবীর করা অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা দিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিকে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে বলেন হাইকোর্ট। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খানের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, ‘শ্রম আদালত তো দুই ধরনের মামলার বিচার করে। একটা ফৌজদারি এবং আরেকটি দেওয়ানি প্রকৃতির। কিন্তু, আবেদনকারী পক্ষ যে অভিযোগ করেছে সেই বিষয়ে আইন পর্যালোচনা করে এসে আদালতে ব্যাখ্যা দেবেন।’
প্রসঙ্গত গত ৬ জুন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা ইসলাম এই আদেশ দেন। ড. ইউনূস ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। এ সময় ড. ইউনূসের পক্ষে ব্যারিস্টার খাজা তানভীর উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের নামে এ মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। গত ১৭ আগস্ট বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলা বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুল খারিজ করে দেন। এই খারিজের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এরপরই শ্রম আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।