নিলামে উঠছে মোংলায় আমদানি করা বিলাসবহুল ১৪৭ গাড়ি
বিদেশ থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির পর তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাড় করিয়ে না নেওয়ায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে নিলামে তুলতে যাচ্ছে। আগামী ৫ জুন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৪৭টি গাড়ির নিলাম হবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ।
এ নিলামে থাকছে ১৯৯৩, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১৩, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের/মডেলের নিশান, পাজেরো, এক্সিও হাইব্রিড, পিয়ার্স হাইব্রিড, টয়োটা ভিজ, প্রোবক্স, অ্যাকুয়া হাইব্রিড, টয়োটা হাইব্রিড, করোলা ফিল্ডার, হায়েসের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। ৫ জুনের এ নিলামকে ঘিরে ইতোমধ্যেই নিলামের দরপত্র বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। নিলামে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই ৩১ মে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও মোংলা কাস্টমস হাউসে দরপত্র জমা দিতে হবে। দরপত্র জমা দেওয়া যাবে অনলাইনেও। এর আগে ৩০ মের মধ্যে যেকোনো সময় দরপত্র সংগ্রহকারীরা বন্দরের কার ইয়ার্ড ও শেডসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা নিলামের এ গাড়িগুলো সরেজমিন দেখার সুযোগ পাবেন।
মোংলা কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (নিলাম শাখা) ছবি রানী দত্ত জানান, মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়িগুলো ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমদানিকারকরা তা করেন না। এরপর আমদানিকারকদের নির্দিষ্ট (৩০ দিন) সময়ের পরও অতিরিক্ত ১০ দিন সময় দিলে গাড়ি ছাড় করিয়ে না নেওয়ায় নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে তা নিলামে উঠানো হয়। পরে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতাদের গাড়িগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মাহফুজুর রহমান বলেন, মোংলা কাস্টমসের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৫২ শতাংশ আসে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক থেকেই। আমদানি করা গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়িয়ে না নেওয়ায় তা নিলাম দেওয়া হয়। তা না হলে বন্দরে গাড়িসহ অন্যান্য পণ্যের জটলা সৃষ্টি হয়। ফলে নিলাম প্রক্রিয়া চালু থাকলে গাড়ি বা অন্যান্য পণ্যের জট কমার পাশাপাশি বন্দর ব্যবহারকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। অপরদিকে নিয়ম অনুযায়ী নিলাম থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ও অব্যাহত থাকবে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, বিগত ৬ মাস মোংলা বন্দরে গাড়ির নিলাম বন্ধ ছিল। গত বছরের নভেম্বরে গাড়ি নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় কাস্টমসের। ফলে ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নিলাম কার্যক্রম। এরপর নিয়মমাফিক চট্টগ্রামের কে এম করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানকে নিলাম প্রক্রিয়া চালানোর জন্য চলতি মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিই আগামী ৫ জুন মোংলা বন্দরে ১৪৭টি গাড়ি নিলামে উঠাচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) কালা চাঁদ সিংহ বলেন, মুলত জাপান থেকে মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ৩ জুন। সে সময়ে প্রথম চালানে ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে এ বন্দরে গাড়ি আমদানির সূচনা করেন ঢাকার হক-বে অটোমোবাইল কোম্পানি লিমিটেড। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মোংলা বন্দর দিয়ে ২২ হাজার ৪৩৭টি গাড়ি আমদানি করেছে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
কালা চাঁদ সিংহ আরও বলেন, আমদানি করা গাড়ির ৬০ ভাগই খালাস হচ্ছে মোংলা বন্দর দিয়ে। বাকি ৪০ ভাগ খালাস হয়ে আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মোংলা বন্দরে কার ইয়ার্ড, শেড ও গোডাউন সুবিধার কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছেন।