পরিচালক আমার নাম দিয়েছেন, প্রতারণা করিনি : কবির বকুল
প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে—গানটি প্রতারণার মাধ্যমে একটি চলচ্চিত্রে ব্যবহারের মামলায় গীতিকার কবির বুকলকে জামিন দিয়েছেন সুনামগঞ্জের একটি আদালত।
আজ বুধবার জেলার বিচারিক হাকিম শহীদুল আমীন এ আদেশ দেন। একই মামলায় চলচ্চিত্র পরিচালক পি এ কাজলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে।
বেলা ১১টায় বিচারক শহীদুল আমীনের আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত কবির বকুলের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের কাছে তিনি স্বীকার করেন, ‘এ গানটির মূল গীতিকার মামলার বাদী জবান আলী। চলচ্চিত্র পরিচালক তাঁর অজান্তে গানটিতে আমার নাম ব্যবহার করেছেন। আমি এ ধরনের কোনো প্রতারণা করিনি।’
গত ১৩ এপ্রিল গানটির মূল গীতিকার পল্লীবাউল জবান আলী দুজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় গীতিকার কবির বকুল ও চলচ্চিত্র পরিচালক পি এ কাজলের বিরুদ্ধে সমন জারির পর আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত ১ ডিসেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলা বিবরণীতে জানা যায়, বাউল জবান আলীর রচিত গানটি ‘প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে’ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পি কুমার বিশ্বজিৎ তাঁর রোদেলা দুপুর অ্যালব্যামে গেয়েছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল। পি এ কাজল পরিচালিত ‘পিরিতের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয়। এতে গীতিকার কবির বকুল গানটির অনেক শব্দ পরিবর্তন করে নিজের নাম লাগিয়ে ব্যবহার করে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ব্যাপারে কবির বকুল আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি—এ গান যখন ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তার আগে থেকেই গানটি খুব জনপ্রিয় ছিল এবং আমরা জানতাম এটি জবান আলীর গান। সে হিসেবে এত পরিচিত একটা গান আমার নিজের নামে দাবি করার প্রশ্নই উঠে না। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই না। ছবিতে যাঁরা সংশ্লিষ্ট তাঁরা গানটি ব্যবহার করেছেন, ওই ছবির অন্যান্য গান আমার লেখা। কিন্তু প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে—গানটি আমার লেখা নয়। ওই ছবির সব গান আমার বলে ভুল করা হয়েছে, যদি ছবির সংশ্লিষ্টরা জবান আলীর নাম ব্যবহার করতেন তাহলে আজকে আমাকে আদালত পর্যন্ত আসা লাগত না।’ পরে তিনি সুনামগঞ্জের আইনজীবী ও সাংস্কৃতিককর্মীদের ধন্যবাদ জানান তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বজলুর মজিদ চৌধুরী খসরু, মো. শেরেনূর আলী, মো. মাসুক আলম, এনাম আহমেদ খলিল রহমান, নাজমুল হুদা হিমেল ও আব্দুর রায়হানসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামছুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন, মো. কামাল হাসেন ও জুনেদ আহমদ।
অ্যাডভোকেট বজলুর মজিদ চৌধুরী খসুর বলেন, ‘এ গান জবান আলী লিখেছেন, কবীর বকুলও বলেছেন- গানটা উনার লেখা নয়। এটা পি এ কাজল তাঁর সিনেমায় ইউজ করছেন কবীর বকুলের নামে। সুতরাং কবীর বকুল এই মামলার আসামিও হতে পারেন না।’
বাদীপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামছুল আবেদীন বলেন, ‘যেহেতু কবীর সশরীরে উপস্থিত হয়ে স্বীকার করেছেন যে গানটির মূল গীতিকার জবান আলী। তাই উনার জামিনে আমরা কোনো প্রকার বাধা দেইনি।’