খুলনায় মধু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে
মধু বললে প্রথমেই মনে আসে সুন্দরবনের কথা। কিন্তু জলদস্যুদের উৎপাত, ব্যাপক হারে গাছ কাটাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ অনেক কমেছে। তবে মধুর চাহিদা কমেনি। আর এই বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে খুলনায় মধু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে মোট তিন হাজার টন মধু সংগৃহীত হয়। এর মধ্যে সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ হয় ৫০০ টন আর বিসিক ও কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষিত চাষিরা উৎপাদন করেন দুই হাজার ৫০০ টন। এই হিসাবই বলে দেয়, মধু চাষে কৃষকরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। আর সাফল্যে বদলে গেছে তাঁদের জীবনের হালচিত্র।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুপারিশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষে আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মৌমাছি সংগ্রহের জন্য বাক্স ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে বিসিক।
গত রোববার দৌলতপুর কৃষি বিভাগের মিলনায়তনে ১৫ জন আগ্রহী কৃষককে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ এবং মৌমাছি চাষের বাক্স দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাক থেকে মধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন উপকরণও দেওয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণ ও মৌমাছি চাষের বাক্স বিতরণ অনুষ্ঠানে খুলনা মহানগর কৃষি কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, এ দেশের কৃষকরা প্রথমে জানতেন না কোন প্রক্রিয়ায় বা কীভাবে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। মধু চাষের ফলে কৃষকরা ক্ষেতের ফসলের উৎপাদনও বেশি পাচ্ছেন।
জাকিয়া সুলতানা আরো বলেন, শস্যক্ষেতে মধু চাষের বাক্স স্থাপন করলে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আবার ফুলে মৌমাছির পরাগায়নের ফলে শস্য উৎপাদন বাড়ে। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে শাকসবজির ক্ষেতেও মধু চাষ করা সম্ভব। আর এভাবে মধু চাষে ক্ষেতের ফলন দ্বিগুণ হতে পারে। আবার মধু থেকে বাড়তি আয়ও হতে পারে। বর্তমান সরকার মধু চাষকে কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কৃষি বিভাগ ও বিসিকের প্রশিক্ষণের পর একটি বাক্স নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন খুলনার ফুলতলার শহীদুল ইসলাম। কয়েক বছর ব্যবধানে তাঁর মৌমাছির বাক্সের সংখ্যা এখন চার শতাধিক। মধু চাষের মাধ্যমে পারিবারিক সচ্ছলতার পাশাপাশি খুলনার ফুলতলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সলিড মধু’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৫০ থেকে ৮০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। মধুচাষিরা মিলে করেছেন মৌচাষি সমবায় সমিতি। এর আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম।
শহীদুল ইসলাম বলেন, তাঁর কাছে সরিষা, লিচু ও কালিজিরা ফুলের মধু এবং সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা মধু পাওয়া যায়। সরিষা ফুলের মধু সুস্বাদু হলেও কালিজিরা মধুতে উপকারিতা বেশি। তার দামও অন্য মধুর চেয়ে বেশি। প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক সৈয়দ মোরশেদ আলী বলেন, দেশে মোট উৎপাদিত তিন হাজার টন মধুর আড়াই হাজার টনই উৎপাদন করেন বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া কৃষকরা। তিনি দাবি করেন, মৌমাছি চাষ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুন্দরবনের আশপাশে এখন যে মধু পাওয়া যায়, তার বেশির ভাগই ভেজাল। সঠিক মধু শনাক্ত করে ক্রয় করা বর্তমানে কঠিন কাজে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া চাষিদের ক্ষেতের পাশ থেকে মধু সংগ্রহের প্রবণতা বেড়েছে।