পুলিশের ধাওয়ায় নদীতে ঝাঁপ, ‘জামায়াত নেতা’র মৃত্যু
সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশের ধাওয়ার মুখে সুরমা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন শাহিন আহমদ (৪২) নামের এক ব্যক্তি। আজ বুধবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের রাগীব-রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শাহিন লামাকাজি ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহসভাপতি ছিলেন। দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করার পর তিনি যুবদলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জামায়াত দাবি করেছে। তবে বিএনপি এই দাবি অস্বীকার করেছে। শাহিনের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় আটটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বনাথ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ভারতীয় তীর (এক ধরনের জুয়া) খেলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা হলেন সিলেট সদর উপজেলার খালেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ (৩২) ও জুনেদ মিয়া (২৫)। এই ঘটনায় আরো ছয়-সাতজনকে পুলিশ আটক করলেও অন্য জুয়াড়িরা পুলিশের কাছ থেকে তাঁদের ছিনিয়ে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ খবর পেয়ে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গিয়ে ১০টি রাবার বুলেট ছুঁড়ে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে বিপুল ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এনামুল হক এনামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিশ্বনাথ থানায় করা আটটি মামলার আসামি শাহিন আহমদ সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেন।
খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিলেটের ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ড. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল ডুবুরি সেখানে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। রাত ৮টার দিকে ডুবুরিরা নদী থেকে নিখোঁজ শাহিন আহমদের মরদেহ উদ্ধার করে।
বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভারতীয় তীর খেলা বন্ধে থানা পুলিশ লামাকাজিতে অভিযানে যায়। পুলিশকে দেখে পালাতে গিয়ে বিশ্বনাথ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শাহিন আহমদ নদীতে ঝাঁপ দেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় দোকানপাট।
লামাকাজি ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মইনউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আগে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় শাহিন আহমদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি যুবদলে যোগ দেন।
এই দাবি অস্বীকার করে বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লামাকাজি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন ধলা মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, নিহত শাহিন আহমদ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহসভাপতি ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি জামায়াতের সমর্থন নিয়ে লামাকাজি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত অন্য কাউকে সমর্থন দেয়। এরপর শাহিন আহমদ নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে তাঁর হয়ে নির্বাচনে কাজ করেন। এরপর জামায়াত শাহিনকে বহিষ্কার করে কিনা বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কিন্তু শাহিন বিএনপি বা যুবদলে যোগ দেননি।
তবে বিএনপি ও যুবদলের বেশ কিছু কর্মসূচিতে শাহিন আহমদ অংশ নিয়েছেন। এই সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে যুবদল আয়োজিত বিএনপি নেতা ধলা মিয়ার গণসংর্বধনা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে শাহিন আহমদকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।