বাংলাদেশ কখনো আফগানিস্তান-সিরিয়া হবে না
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশকে কখনো আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা সিরিয়া হতে দেওয়া হবে না। এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা জঙ্গি ও মৌলবাদকে কখনো সমর্থন করে না। অতীতেও করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলা পুলিশ লাইনস মাঠে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন পুলিশপ্রধান।
এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘সন্ত্রাস আমরা দেখেছি ২০১৩ সালে। যেখানে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ১৮ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো হয়নি। আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়াবেন, গাড়ি, স্কুল-মাদ্রাসা পোড়াবেন তা হতে দেওয়া হবে না।’
এসব কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ২০১৩ সালে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পেরেছি। জঙ্গি তৎপরতাও উড়িয়ে দিয়েছি। জনগণ আমাদের পাশে ছিল। জনগণ আমাদের মূল শক্তি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এসব অপতৎপরতা নির্মূল করেছি।’
এ কে এম শহীদুল হক সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে কাজ করার জন্য কমিউনিটি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশকে থানা পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। থানার ওসিরা যদি সঠিক তথ্য দিতে না চান কিংবা তথ্য গ্রহণে অবহেলা করেন এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তবে তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কোনো ঘটনা ঘটলে তা প্রথমে মীমাংসার জন্য চেষ্টা করবে কমিউনিটি পুলিশ। মীমাংসা না হলে পরে মামলা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা সমস্যা সমাধানের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কমিউনিটি পুলিশ থেকে টাউট-বাটপাড়দের বাদ দিয়ে জনগণের আস্থাসম্পন্ন ভালো লোক নিয়োগ করতে হবে। তবেই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ স্থাপিত হবে।’
জঙ্গি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আমরা হত্যা করতে চাই না। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু যখন আমাদের জীবনের ওপর আঘাত আসে তখন আমরা আমাদের জীবনের বিনিময়ে তাদের বাঁচাতে পারি না।’
মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং একটি সামাজিক আন্দোলন। সমাজ থেকে অন্যায় ও অপরাধ দূরীকরণে জনগণ ও পুলিশের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনার জন্য এ আন্দোলন প্রবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় এই কমিউনিটি পুলিশিং একটি অত্যন্ত কার্যকর পন্থা।
জেলা পুলিশ সুপার ও কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, মনোহরদী-বেলাব আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, পলাশ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন, শিবপুর আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূঞা, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল, কমিউনিটি পুলিশিং জেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ড. মশিউর রহমান মৃধা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ কমিউনিটি পুলিশিংয়ের স্লোগান দিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেয়। মহাসমাবেশ থেকে ‘পুলিশিই জনতা, জনতাই পুলিশ’ বার্তা প্রচার করা হয়।
এর আগে আইজিপি সাহেপ্রতাপে অফিসার্স মেস ও নারী পুলিশ ব্যারাকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং নবনির্মিত পুলিশ ব্যারাকের উদ্বোধন করেন।