ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শপথ নিল ভৈরবের শিক্ষার্থীরা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জেড রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এমপি পাইলট বালিকা ও ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইভ টিজিং (যৌন হয়রানি) ও বাল্যবিবাহ না করার শপথ নিয়েছে। সোমবার সকাল, দুপুর ও বিকেলে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম প্রধান অতিথি ও ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
বেলা ১১টার দিকে প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজ হলরুমে অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানিকে লালকার্ড বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা গর্ভন্যান্স প্রজেক্টের (ইউজেডজিপি) সহযোগিতায় ওই কর্মশালার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, যৌন হয়রানি ও বাল্য বিবাহ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। মানবিক ও মানসিক সুষ্ঠু ধারাকে বিশৃঙ্খল করে। ব্যক্তি জীবনে সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নগতিকে অব্যাহত রাখতে এই দুই প্রতিবন্ধকতাকে আমাদের অপসারিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারো তোমরা। তোমরা ওই দুই সামাজিক ব্যধিকে লালকার্ড দেখালে, তবেই এই কর্মসূচি সফল হবে।
জহিরুল ইসলাম এই সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চাইলে সবাই লালকার্ড প্রদর্শন করে যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহকে না বলে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ভৈরবের ইউএনও দিলরুবা আহমেদ বলেন, যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা সমাজের তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা প্রতিটি মানুষকে এর কুফল বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের এই নরম আহ্বানকে কেউ যদি দুর্বলতা মনে করে থাকেন, তবে আমরা প্রয়োজনে যে কত গরম, কত কঠোর হতে পারি সেটার উদাহরণও নিশ্চয় আপনারা বুঝেছেন। বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষার্থী, বখাটে, মৌলভী ও কন্যার বাবাদের আর্থিক জরিমানাসহ জেল দিয়েছি। আমার এই কথার অর্থ হলো, সরকার ঘোষিত ও সংবিধানে নির্দেশিত সব আইন আপনাদের মানতে হবে। না মানলে আমরা আইনের ব্যত্যয়ে যে শাস্তি, সেটা প্রদান করব।
এ সময় ইউএনও কলেজের সব ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথকভাবে যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহ বন্ধে শপথ বাক্য পাঠ করান। শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে নিজ নিজ নাম উল্লেখ করে শপথ বাক্য পাঠ করেন।
প্রভাষক মো. শাহ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয় নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার তন্বী, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মো. নেয়ামত উল্লাহ, প্রিমিয়ার ব্যাংক বাঁশগাড়ি শাখার উপব্যবস্থাপক জাবেদ ওমর কবির, আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ, গজারিয়া ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার গোলাপ, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আসমা আহমেদ, জেড. রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ফরিদুল হাসান টুটুল, জর্জ ফ্রান্সিস সরকার প্রমুখ।
দুপুর ১টার দিকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুরূপ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ভৈরব এমপি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক এম এ মুহিত। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম যৌন হয়রানি ও বাল্য বিবাহকে সামাজিক দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করে তা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনও দিলরুবা আহমেদ জানান, বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণার পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি গাড়ি নয়, পাবলিক যানবাহনে গোপনে সেই সব এলাকা পরিদর্শন করবেন তিনি। অভিযানে কেউ আটক হলে কারো সুপারিশে কাজ হবে না। জেলে যেতে হবে ওই ইভ টিজারকে। পরে তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহকে লালকার্ড প্রদর্শনসহ তা বন্ধে শপথপাঠ করান।
ওই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরা জামান প্রভা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মোশারফ হোসেন, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর হাবিবুল্লাহ নিয়াজ, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আলহাজ আল মামুন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান আসমা আহমেদ প্রমুখ।
বেলা ৩টার দিকে ইউসুফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. পিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানিকে লালকার্ড বিষয়ক সচেতনতামূলক অপর এক অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এবং শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান ইউএনও।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আলহাজ মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম।