‘গুরুর’ কাছে চাইতে গেলেন দোয়া, পেলেন ১৪৪ ধারা
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানকে কেন্দ্র করে দলটির কার্যালয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ নির্দেশনা জারি ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রায়পুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মতিন বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ আজ রায়পুরা বাজারসংলগ্ন গোল চত্বর এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে একই স্থানে সভা আহ্বান করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লিখিত অনুমতি চাইলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই এলাকায় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নবাগত সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাউসারের রায়পুরায় আগমনকে কেন্দ্র করে রায়পুরায় চরম উত্তেজনা চলছিল। এ নিয়ে নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজুর সমর্থক ও রিয়াজুল কবির কাউসারের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান নেন।
জানা গেছে, রিয়াজুল কবির কাউসার সকাল ১০টার দিকে রায়পুরা উপজেলায় ঢোকেন। তিনি পথে পথে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে বেলা ১১টার দিকে শ্রীরামপুর রেলগেটসংলগ্ন রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু অডিটরিয়ামে যান। সেখানে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ফুলের তোড়া নিয়ে তাঁর কাছে দোয়া চাইতে যান। কিন্তু রাজু অসুস্থ আছেন জানিয়ে তাঁর সমর্থকরা কাউসারকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। পরে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে কাউসার পাশেই গোল চত্বর এলাকায় রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে কাউসার সমর্থকরা মারমুখী হয়ে উঠলে প্রশাসন তাদের শান্তিপূর্ণভাবে নিবৃত করে। কিছুক্ষণ পর রাজুর পক্ষ মাঠে অবস্থান নেয়। প্রশাসন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রায়পুরা বাজারসংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপর নবাগত কেন্দ্রীয় নেতা তাঁর সহস্রাধিক সমর্থক নিয়ে রায়পুরা বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে হেঁটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে দুপুরে রায়পুরা বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে বাজার বেবিস্ট্যান্ডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি নেতাকর্মীদের শান্ত থেকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ দিতে অনুরোধ জানান।
এদিকে গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে পরিস্থিতি লক্ষ করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু ও কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজুল কবির কাউসার ঢাকার উদ্দেশে রায়পুরা ত্যাগ করেন।
যোগাযোগ করা হলে রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজুর একসময়ের ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাউসার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ফুলের তোড়া নিয়ে আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজুর কাছে দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি অসুস্থ আছেন জানিয়ে তাঁর কর্মীরা আমাকে দেখা করার সুযোগ দেননি।’
কাউসার বলেন, ‘প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে তা আমার বোধগম্য নয়।’
রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড জ্বরে অসুস্থ হয়ে অচেতন ছিলাম। কাউসার আমার এখানে আসছে, এটা শুনেছি। কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তবে আমি শুনেছি সে বিভিন্ন এলাকায় সংক্ষিপ্ত সভা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে। কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। তবে প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করল সেটা আমার বোধগম্য নয়।’
সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহম্মেদ আরো বলেন, ‘সে (রিয়াজুল কবির কাউসার) ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে আমার সাথে ছিল। দীর্ঘদিন পর সে লোকজন নিয়ে এলাকায় এসে সভা-সমাবেশ করে অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে এটা আমি আশা করি না।’
এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রায়পুরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনাটি আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার। ঘটনা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। আমরা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিকরা কোনো নেতার ব্যক্তিগত ভুলের খেসারত দিতে রাজি নই। তাই আমরা দলীয় নেত্রীর নির্দেশ আর নেতৃত্বেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’