মেধাবীদের দেশ ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে
এ দেশ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদদীন আর লালনের। এ দেশ ৩০ লাখ হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান শহীদের রক্তে অর্জিত। এ দেশ পৃথিবীর সব দেশের রানি। আমাদের অপার সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ আছে। আছে প্রাকৃতিক সম্পদ। আছে শক্তি-সাহস আর মেধা। সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একদিন আমরা অবশ্যই সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব, আমরাও পারি। যেমনি করে ১৯৭১ সালে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে আমরা গোটা দুনিয়াকে অবাক করে দিয়েছিলাম।
আজ শুক্রবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কাকলি খেলাঘর আসর আয়োজিত কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অনুষ্ঠানের অতিথি আলোচকরা। এ সময় তাঁরা আরো বলেন, যে মানুষের মাঝে দেশপ্রেম নেই, নেই মানবপ্রেম- সে প্রকৃত মানুষ নয়। কারণ দেশ ও মানবপ্রেমই একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে ফুটিয়ে তোলে। তাই আজকের মেধাবীদের দেশ ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ‘আমি’ নয়, সব সময় ‘আমরা’ এই ভাবনায় নিজেকে ভাবতে হবে।
সারা দেশে অব্যাহতভাবে শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ ও নারীর ওপর সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় আলোচকরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। লজ্জা ও আতঙ্ক প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায়। তাঁরা এসব বন্ধে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন। কামনা করেন দেশের প্রতিটি মানুষের নিরাপদ জীবনযাপনসহ ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকদের কাছে দাবি করেন, কেবল পড়াশোনার চাপ নয়-শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলাসহ সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার প্রতিও যেন লক্ষ রাখা হয়। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে যেন তাঁরা নিজ সন্তানদের সহায়তা করেন।
ভৈরবের জিল্লুর রহমান পৌর মিলনায়তনে কাকলী খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দেশবরেণ্য নাট্যজন, নাট্যসারথি আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক ও খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ্ পলাশ, ভৈরবের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ, পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ, সমাজকর্মী কানিজ ফাতেমা রউফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী মির্জা মো. সুলায়মান, লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গীতালি হাসান, ডা. মো. হাবিবুর রহমান।
কাকলী খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নজরুল ইসলাম রিপনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিশিষ্ট নাট্যকার-নির্দেশক গোবিন্দ বাগচী, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি ভৈরব শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফারুক, কৃতী শিক্ষার্থী রাইনান সেলিম অভিক, ইশরাত জাহান নিপু প্রমুখ।
আলোচনা শেষে ২০১৫ সালে ভৈরব উপজেলা থেকে প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তিপ্রাপ্ত ২৯৮ জন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
এর আগে গোবিন্দ বাগচী রচিত ও নির্দেশিত নাটিকা ‘ইতিহাস কথা বলে’ মঞ্চস্থ হয় কাকলী খেলাঘরের শিশু-কিশোরদের অভিনয়ে। নাটিকাটিতে ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটির প্রেক্ষাপট ও অভিনেতা-কুশীলবদের উপস্থাপনা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ ও আবেগতাড়িত করে তোলে।