প্রাক-বাজেট আলোচনায় সম্পদের সুষম বণ্টনের ওপর গুরুত্বারোপ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের মমতাজউদ্দিন কলাভবনের মোশাররফ হোসেন গ্যালারিতে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
‘প্রাক-বাজেট আলোচনা ২০১৫-১৬ : উন্নয়নের আঞ্চলিক অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এন কে নোমান। অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক তারিক সাইফুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের রাবির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক।
উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিবেচনা করলে দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে জাতীয় সম্পদ সুষমভাবে বণ্টন ও উন্নয়নে তা ব্যয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের বাজেটে তার প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। আগামী বাজেটে সরকার সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন বরাদ্দ ও তার বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ গবেষণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা দিতে পারবে উল্লেখ উপাচার্য এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি উন্নয়নে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
২০১৫-১৬ বাজেটকে অধিক কার্যকর ও ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. এ এন কে নোমান উন্নয়নে আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আর এ জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা, আঞ্চলিক বৈষম্য (সরকারি খরচের বৈষম্য), ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল ও বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, গ্রামীণ পরিবহন খাত, ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণ ও পরিবহন এবং কৃষিতে ক্ষুদ্র উৎপাদকদের হাত সুসংহতকরণ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে কিছু প্রস্তাবনা রাখেন।
এর মধ্যে রয়েছে ১. পদ্মার ওপর কোনো বাঁধ নয় বরং নাব্যতা বৃদ্ধি করে সারা বছর নৌপরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ। ২. প্রাকৃতিক জলাধারগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমের পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। ৩. সেচের ক্ষেত্রে অপচয় হ্রাসে সেচ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ। ৪. সরকারি খরচে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে হবে। ৫. কৃষির ঝুঁকিহ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মেধা বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে। ৭. মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে হবে। ৮. গ্রামীণ পরিবহন খাতকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা এবং এর মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ৯. ফল ও শাক-সবজির স্বাস্থ্যসম্মত সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ।
এ ছাড়া সেমিনারে মূলধনের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, ভূমিকম্প ও শিক্ষা বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. এ এন কে নোমান কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মু. শামসুল আলম বীরপ্রতীক, অধ্যাপক এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন, অধ্যাপক মো. ফখরুল ইসলাম, অধ্যাপক আফরাফ উজ্জামান খান চৌধুরী, অধ্যাপক কে বি এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক মো. আব্দুল কাইয়ূম প্রমুখ।